বাংলাহান্ট ডেস্ক : একটা সময় বাঙালিরা হাওয়া বদল করতে বা স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য পশ্চিমে যেতেন। এই পশ্চিম কিন্তু ভারতের পশ্চিমের রাজস্থান কিংবা গুজরাট নয়। এই পশ্চিম ছিল ঝাড়খন্ড। বাংলা পশ্চিম প্রান্তে ঝাড়খন্ড অবস্থিত হওয়ায় অনেকেই এই জায়গাকে পশ্চিম বলে ডাকতেন। সেই সময় ঝাড়খন্ড (Jharkhand) আলাদা রাজ্য হয়নি।
বাঙালিদের কাছে সেই সময় বিহারের শিমুলতলা ছিল পশ্চিমে ঘুরতে যাওয়ার অন্যতম প্রিয় জায়গা। বর্তমানেও এমন বহু জায়গা রয়েছে যা ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ। আমরা আজ কথা বলব ম্যাকলাস্কিগঞ্জ (Mccluskieganj) সম্পর্কে। এই জায়গাটি বর্তমানে ঝাড়খন্ড রাজ্যের অন্তর্গত। শিমুলতলা, রাঁচির মতো এই জায়গাটি জনপ্রিয় না হলেও এখানকার সৌন্দর্যতা টেক্কা দিতে পারে দেশ-বিদেশের বহু বিখ্যাত পর্যটনস্থলকে।
এই জায়গাটিতে একটা সময় ছিল ব্রিটিশদের বসবাস। খনিজ পদার্থের জন্য বহু প্রাচীন কাল থেকেই সমৃদ্ধ ছিল ছোটনাগপুর অঞ্চল। ব্রিটিশরাও সেই খনিজ পদার্থের সন্ধানে পারি দেন এই মালভূমি অঞ্চলে। এখান থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করে সেই সময় রপ্তানি করা হতো বিদেশে। এই জায়গায় রেলপথ তৈরির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ম্যাকলাস্কি নামের এক সাহেবকে।
কাজের সূত্রে তিনি কলকাতা ছেড়ে পাকাপাকিভাবে ছোটনাগপুর অঞ্চলে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এই সাহেবের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সমৃদ্ধশালী হতে থাকে এই জায়গাটি। পরবর্তীকালে এই সাহেবের নামেই এলাকার নাম দেওয়া হয় ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। বিভিন্ন ব্রিটিশ স্থাপত্য ছড়িয়ে রয়েছে এই এলাকার বিভিন্ন অংশে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় শাল শিমুল পিয়ালের গাছের সারি।
সেই গাছের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে লাল মোড়ামের রাস্তা। একদিকে যেমন ছোটনাগপুর অঞ্চলের মালভূমির রূপ রুক্ষ, অন্যদিকে অজস্র ছোট ছোট নদী, ঝরনা এই জায়গাকে মনোরম করে তুলেছে। ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য, কটেজ দেখতে পাওয়া যায় অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়। পূর্ণিমার রাতে জোছনার আলো যখন পরে গাছের উপর, তখন গোটা জঙ্গল যেন চিকচিক করে ওঠে এক মায়াবী রূপে।
ম্যাকলাস্কিগঞ্জ যেতে হলে আপনাকে হাওড়া থেকে উঠে পড়তে হবে রাঁচিগামী যে কোনও ট্রেনে। রাঁচি স্টেশন থেকে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ এর দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। রাঁচি স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে আপনার পৌঁছে যেতে পারেন অপূর্ব এই জায়গায়। অথবা হাওড়া স্টেশন থেকে শক্তিগড় এক্সপ্রেসে উঠলে আপনারা সোজাসুজি পৌঁছে যেতে পারেন ম্যাকলাস্কিগঞ্জ স্টেশন।