বাংলাহান্ট ডেস্ক : মুড়াগাছার আশু শেখ। গত পাঁচ বছর ধরে থাকতেন ব্যাঙ্গালোরেই। নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। স্ত্রী দোলাহারও সেখানকারই একটি বাড়িতে পরিচারিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আশুর দশ বছরের ছেলে সাকিল আর ওর ভাই পাঁচ বছরের সালামও থাকত মা বাবার সঙ্গেই। প্রায় একবছর ধরে এমনকি ঈদেও মুড়াগাছার (Murgacha) বাড়িতে আসতে না পারার জন্য শেষমেশ গ্রামে ফেরার ট্রেন ধরেছিলেন।
আর সেই ট্রেন ধরাই যেন কাল হল আশু শেখের। জানা গিয়েছে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ধরেছিলেন। ট্রেন দু’ঘণ্টা দেরিতে চলছিল বলেও জানান তিনি। দুপুরের খাওয়া শেষ করে একটু জিরিয়ে নিয়ে তিনি যখন তাস খেলায় মগ্ন তখন হঠাৎই সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ভয়ঙ্কর ঝাকুনি অনুভব করেন। আর সেই সঙ্গেই তার জীবনে ঘটে যায় বড়সড় বিপর্যয়।
ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে জ্ঞান হারান আশু। এরপর জ্ঞান ফিরতে যে দৃশ্য আশুর নজরে আসে তা রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত। আশুর কথায়, “আমি ট্রেনের সিটের ফাঁকে। আমার স্ত্রীরও একই অবস্থা। দুই ছেলে শুধু একটি সিটের গায়ে বসে ছিল কোনও মতে। খানিকটা ধাতস্থ হয়ে বুঝতে পারি, আমাদের কামরা উল্টে গিয়েছে। লোকজন সব চিৎকার করছেন।”
ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আশু বুঝতে পারেন তার ছোট ছেলে সালামের কোন সাড়া নেই। এরপর সালামের চোখে মুখে জল ছেটানোর পরেও তার জ্ঞান না ফেরায় কোনমতে ট্রেন থেকে বেরনোর প্ল্যান করতে থাকেন। আশু জানান, দরজা কোন দিকে, বুঝতে না পারায় জানলা ভেঙে বেরোতে হয়। আশুর এক সহযাত্রীই জানলা ভাঙেন বলেই আশু উল্লেখ করেন।
আশু বলেন, “মৃতদেহের উপর দিয়েই কোনও মতে এক ছেলেকে কাঁধে ফেলে, স্ত্রী এবং আর এক ছেলের হাত ধরে ছুটতে শুরু করি। পুলিশের পোশাক পরা এক জনকে দেখে জানাই, ছেলের জ্ঞান নেই। তিনিই আমাদের একটি টোটোয় তুলে দেন। কাছের স্টেশনে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। ওই স্টেশনের নামটা আর মনে করতে পারছি না। সেখানে ছেলের জ্ঞান ফেরান চিকিৎসকেরা।”
শেষমেশ তাদের হাওড়াগামী ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়। এরপর হাওড়া থেকে বাসে করে ঘরে ফেরেন মুড়াগাছার এই ব্যক্তি। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে টাকা পয়সা, মোবাইল সব কিছুই খোয়া গিয়েছে আশুর। শুধু তাই নয়, এখনও পর্যন্ত মাথা ঘুরছে তার ছেলেদের। কাহিল হয়ে পড়েছেন তিনিও। তবে আশুর কাছে সব চেয়ে বড় কথা এখন একটাই, “এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার পরেও আমার গোটা পরিবার বেঁচে রয়েছে। সেটাই বিশ্বাস হচ্ছে না!”