বাংলা হান্ট ডেস্ক : খেজুরির ঠাকুরনগরের সভার মঞ্চ থেকে তৃণমূল এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) কার্যত তুলোধোনা করলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। এদিন মঞ্চে উঠেই শুভেন্দু নির্দেশ দিলেন ‘বন্ধ করুন সমস্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র।’ কাঠফাটা গরমে থিক থিক করা ভিড়কে সম্বোধন করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বললেন, ‘এসিগুলো সব বন্ধ আছে। আপনারাও ঘামছেন, আমরাও ঘামছি। আমরা তো সবাই কর্মী, নেতা তো একজনই, নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি।’ শুভেন্দুর এই মন্তব্য শুনেই হাততালির ঝড় ওঠে খেজুরির জনসভায়।
এদিন দুপুর দুটোর সময় জনসভার আয়োজন করা হয় কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। অথচ বিকেল তিনটে পর্যন্ত মাঠ ছিল প্রায় ফাঁকা। কিন্তু ছবি বদলায় সাড়ে তিনটে নাগাদ শুভেন্দু অধিকারী মঞ্চে ওঠার ঠিক আগেই। সভাস্থলে উপচে পরছে ভিড়। গত ৩ এপ্রিল খেজুরির এই ঠাকুরনগরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করেছিলেন। সোমবার তারই পাল্টা জনসভা ছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতার। মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল থেকে ঠিক ৫০ মিটার দূরেই ছিল বিজেপির এই সভা।
এদিন সকাল থেকেই গোটা জেলা জুড়ে ছিল মারাত্মক গরম। দুপুর গড়িয়ে সভা শুরু হওয়ার পরেও বহু আসনই ছিল ফাঁকা। পরে অবশ্য সমস্ত আসন ভরে যায় শুভেন্দু অধিকারী মঞ্চে ওঠার আগেই। মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠে বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘এখানে আপনাদের কিছু দিতে পারিনি। খাবার তে দূরের কথা, জলের বোতলটুকুও দিতে পারিনি। ৬০ হাজার জলের পাউচ রাখা আছে। ৪০ পয়সা করে মূল্য। এটা পিসি ভইপোর দলের সভা নয়, এটা বিজেপির সভা।’
এদিন মঞ্চে হাজির বিজেপি বিধায়ক এবং দলীয় নেতাদের জন্য এয়ারকুলারের বন্দোবস্ত করা হয়। যদিও বিরোধী দলনেতা তা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তিনি এও বলেন, ‘আপনিও কর্মী। আমিও কর্মী। নেতা একজনই—নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি।’ জনসভায় যোগ দেওয়া দলের কর্মীদের উদ্দেশে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘আপনারাও ঘামছেন। আমিও ঘামছি। এগুলো সব বন্ধ রাখা আছে। এগুলো কিন্তু চলছে না। এটা পিসি- ভাইপোর পার্টি নয়। এটা বিজেপি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতা মন্ত্রী কর্মী সবাই সমান।’
কয়েক দিন আগেই অনুষ্ঠিত হওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সভার প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু বলেন, ‘সেদিন ১৬ হাজার বর্গফুট জায়গায় লোক বসেছিল। আজ ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গায় বসার ব্যবস্থা। সেদিন ব্যারিকেড ছিল। হেলিকপ্টার দেখার জন্য কিছু ভিড় ছিল। যারা ভোটার নয়, ৪ হাজার স্কুলপড়ুয়াকে সাইকেল দেওয়ার নাম করে জোর করে নিয়ে এসেছিল ওরা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় ৩ হাজার মহিলা এসেছিলেন। বিডিওরা বলেছিলেন অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা করে ঢুকিয়ে দেব। এই জেলার পুলিস সুপার শুধু চটি চাটতে ব্যস্ত। আড়াই হাজার সিভিক সহ চার হাজার পুলিস এনেছিলেন এখানকার পুলিস সুপার। পিসিমণিকে যাতে কেউ প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে বলতে না পারে বালি চোর, চাকরি চোর, কয়লা চোর, গরু চোর। আজ যাঁরা এখানে এসেছেন তাঁদের ৯৯ ভাগই ভোটার।’
এরপরই শুভেন্দু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে নজিরবিহীন কটাক্ষ করে বলেন, ‘আগের দিন কার সভা ছিল? চোর! চোর! চোর! আপনারা সবাই বলুন। সঙ্গে সঙ্গেই মঞ্চের নিচ থেকে আওয়াজ ওঠে চোর! চোর! চোর!’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শুভেন্দুর এই ভরা জনসভা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।