বাংলা হান্ট ডেস্ক : কামারপুকুরের এক ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। ১৮৩৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং চন্দ্রমণি দেবীর কোল আলো করে পৃথিবীতে এসেছিলেন এই মহাপুরুষ। প্রথাগত শিক্ষা তাঁর না থাকলেও সহজ সরল ভাষায় ছোটছোট গল্পের মধ্যে দিয়ে তিনি মানুষকে জীবনের জ্ঞান দিয়ে গিয়েছেন। তো এহেন মানুষটি ১৮৮৬ সালের ১৬ অগাস্ট পরলোক গমন করেন।
যদিও শ্রীরামকৃষ্ণের অনন্তলোক-যাত্রার তারিখটি নিয়ে একটু দ্বিমত রয়েছে ভক্তদের মনে। কেউ কেউ বলেন, ১৫ অগস্ট মধ্যরাত্রেই শ্রীরামকৃষ্ণ তিরোধান গমন করেন। শ্মশানের খাতায় ৯৫০ নম্বর এন্ট্রিতে লেখা— ১৫ অগস্ট ১৮৮৬! যদিও এখন সবাই জানেন, মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘর পেরোলেই তারিখ পাল্টে যায়। সেই হিসেবে ১৬ অগস্ট দিনটিকেই মহাপুরুষের মৃত্যু দিবস বলে মানা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শৈশব জীবনে রামকৃষ্ণদেবের নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। মা বাবার চতুর্থ সন্তান ছিলেন তিনি। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি ১৯ শতকে বাঙালির নবজাগরণে অন্যতম ভূমিকা নেন। বাঙালিকে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন তিনি। বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে গিরিশ ঘোষ কিংবা নটি বিনোদিনী, প্রত্যেকের জীবনে এক অন্যমাত্রা যোগ করেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।
আরও পড়ুন : ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় হুহু করে ঢুকছে তিস্তার জল! ভারতের উপর চটে লাল বানভাসি বাংলাদেশ
মাত্র ৫২ বছর বয়সে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে মারা যান শ্রীরামকৃষ্ণ। শেষকৃত্য হয় কাশীপুর শ্মশানেই। জানা যায়, গলায় ক্যান্সার হয়েছিল তাঁর। যদিও ঠাকুরের শেষ দিনগুলির কাশীপুর-বৃত্তান্ত দুই জীবনীকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ও স্বামী সারদানন্দ কেউই বিস্তারিত ভাবে লিখে যাননি। মহেন্দ্রনাথ শুধু লিখে গেছিলেন, ‘ঠাকুর দশ মাস ধরে ভুগেছিলেন, গলায় ঘা হয়েছিল, ভক্তেরা সেবা করে পরিশ্রান্ত, ‘‘ডাক্তারের হাত ধরে কাঁদতেন, ভাল করে দাও বলে’’ এবং শেষকালে বলতেন, ‘‘মা আমার শরীর রাখবেন না।’’
আরও পড়ুন : আর কত দূর? বাকিদের ‘টাটা’ করে চাঁদের পথে ল্যান্ডার! শেষ কক্ষপথ পার করে গেল ‘চন্দ্রযান 3′
ঠাকুরের শেষের দিনগুলি প্রসঙ্গে বৈকুণ্ঠনাথ সান্যাল লিখেছেন, ‘‘আজ ভাতের পায়স খাব’’ শুনে সকলে আশ্বস্ত। কিন্তু ওই দিনেই ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি—‘‘ভিতরে এত ক্ষিধে যে হাঁড়ি হাঁড়ি খিচুড়ি খাই, কিন্তু মহামায়া কিছুই খেতে দিচ্ছেন না।’’ এছাড়া সেবক শশীর নোট অনুযায়ী, ‘পুরো এক গ্লাস পায়েস পান করেন।’ তার পর ঠাকুর নাকি বলেন, ‘আঃ শান্তি হল। এখন আর কোনও রোগ নেই।’
তবে রোগ যে সারেনি সেকথা জানান দিল খানিক পরেই। রাত্রি তখন প্রায় একটা। স্বামী অভেদানন্দ তার লেখায় বর্ননা করেছেন, “একটা বাজিলে অকস্মাৎ তিনি একপাশে গড়াইয়া পড়েন। তাঁহার গলায় ঘড়ঘড় শব্দ হইতে থাকে। নরেন তাড়াতাড়ি তাঁহার পা লেপে ঢাকিয়া ছুটিয়া সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া যান। এ দৃশ্য তিনি সহিতে পারিতেছিলেন না। নাড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আমরা সকলে ভাবিলাম, উহা সমাধি।’’ পরদিন অর্থাৎ ১৬ অগস্ট সকালবেলায় ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার এসে ঠাকুরের নাড়ী পরীক্ষা করে জানান, ঠাকুরের প্রাণবায়ু নির্গত হয়েছে।