বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিজ্ঞানীরা বার বার পৃথিবীর বায়ু পরিবর্তন নিয়ে সতর্ক করেছেন। দিনের পর দিন জীবাশ্ম-জ্বালানি থেকে চলা গাড়ি বায়ুদূষণ উৎপন্ন করেছে। যার ফলে বিশ্বে দূষণের স্তর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এছাড়াও ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে পেট্রোল-ডিজেল। তাই বিকল্প হিসেবে বিশ্বের গাড়ির বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ির (Electric car switzerland) চাহিদা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিগত কয়েক বছরে।
ভারতেও ইলেকট্রিক গাড়ি এবং বাইকের চাহিদা গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। ইলেকট্রিক গাড়ির বিশ্বব্যাপী চাহিদা বৃদ্ধির মাঝেই এই গাড়ি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে চাইছে সুইৎজারল্যান্ড! ইউরোপের প্রথম সারির একটি দেশ সুইৎজারল্যান্ড। সেই দেশই কিনা ভবিষ্যতের বিকল্পকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে! কিন্তু হঠাৎ কী এমন হল যার জন্য এই চরম পদক্ষেপ নিতে চলেছে তারা?
সে দেশের মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, লোডশেডিং এড়াতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর জন্য একটি খসড়াপত্র তৈরি করেছে সুইস সরকার। এটি কার্যকর হলে সুইৎজারল্যান্ড প্রথম দেশ হবে যারা এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নিল। সুইৎজারল্যান্ড চূড়ান্ত ভাবে জলবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। সেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে।
কিন্তু শীতকালে জলবিদ্যুতের উৎপাদন কমে যায়। এই সময়ে প্রতিবেশী ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে দেশকে সচল রাখে সুইৎজারল্যান্ড। কিন্তু গোটা ইউরোপেই এখন বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে। এর কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। স্বাভাবিকভাবেই ফ্রান্স ও জার্মানিতেও বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই এই অবস্থায় সুইৎজারল্যান্ডকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।
ফ্রান্সের বিদ্যুৎ সংস্থা ইডিএফ জানিয়েছে, এ বছর তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রবল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিগত ৩০ বছরে এমন ঘাটতি দেখা যায়নি। এর কারণ যুদ্ধের জন্য একাধিক পরমাণু কেন্দ্র বসে গিয়েছে। ইউরোপের বিদ্যুৎ ঘাটতিতে প্রচণ্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফ্রান্স। ইউক্রেনের উপর রাশিয়া হামলা চালানোর পরেই গোটা ইউরোপে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি রপ্তানিকারী দেশ রাশিয়া। ইউরোপও তাদের সরবরাহের উপর প্রচণ্ড ভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু যুদ্ধের ফলে তারাও সরবরাহ কমিয়েছে। ফলে ইউরোপের দেশগুলিকে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে অন্যান্য উপায় ভেবে নিতে হয়েছে। কিন্তু এর মাঝে বিপদে পড়েছে সুইৎজারল্যান্ড। প্রতিবেশী দেশগুলির থেকেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় সেখানে লোডশেডিং হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকছে।
এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে দেশের নাগরিকদের বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিভিন্ন আবাসনে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। এছাড়াও বড় ধরনের কোনও রকম কনসার্ট, খেলা এমনকী থিয়েটারের পারফর্ম্যান্সও করা যাবে না। তাতেও সমস্যা না মিটলে শুধুমাত্র জরুরি কাজের জন্য ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার করার প্রস্তাব আনবে সুইৎজারল্যান্ড সরকার।