‘ইনকাম না করলে দেব কীভাবে!’ বিয়ের জন্য বাড়িতে বেনামী চিঠি, এবার মুখ খুললেন দেবাংশুর মা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ছোট্ট থেকেই ‘দিদি’র ফ্যান। বইয়ের মাঝে লুকিয়ে রাখতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ছবি। আজ তাঁরই দলের টিকিটে তমলুক থেকে দাঁড়িয়েছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya)। ‘খেলা হবে’ গান দিয়ে তেরো থেকে তিরাশির মন জয় করা এই যুব নেতার চোখে এখন একটাই স্বপ্ন, ‘অধিকারী গড়ে’ ঘাসফুল ফোটানো। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে লোকসভা কেন্দ্রের নানান প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি।

তমলুকের তৃণমূল (TMC) প্রার্থী যখন ভোট প্রচারে ব্যস্ত, তখন তাঁর মা তনুজাদেবী জনপ্রিয় এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করলেন ছেলের নানান অজানা কাহিনী। মা চাইতেন, পড়াশোনা করে ছেলে বড় চাকরি করুক। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পাশ করার পর চাকরিও পেয়ে গিয়েছিলেন দেবাংশু। তবে একদিন আচমকা সব ছেড়ে দেন, পা রাখেন রাজনীতির ময়দানে।

সুদর্শন যুব নেতা, কথাবার্তা চৌখস, সমাজমাধ্যমে নজরকাড়া ‘ফ্যান ফলোয়িং’। এহেন দেবাংশুর বাড়িতে এখন প্রায় রোজই আসছে বিয়ের প্রস্তাব। তনুজাদেবী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আর বলবেন না! আমার বাড়িতে যে কত বেনামী চিঠি এসে হাজির হয়, দেখে আর পারি না!’

আরও পড়ুনঃ মামলা করতেই বাড়ল নম্বর! হাই কোর্টের নির্দেশে মেধা তালিকায় মিলল স্থান পেল পরীক্ষার্থী

বাড়িতে নিত্যদিন পাত্রীর ছবি এবং চিঠি আসলেও ছেলের বিয়ে নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু ভাবছেন না দেবাংশুর মা। তনুজাদেবী সাফ বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়েরই বয়স হয়নি’। সেই সঙ্গে এও জানান, ‘আমার ছেলে তো কোনও চাকরি করে না। নিজে যদি ইনকাম না করে তাহলে কীভাবে বিয়ে দেব! ওঁর দিদির এখনও বিয়ে দিইনি’।

দেবাংশুর মা জানান, ছোট থেকেই রাজনীতির প্রতি প্রবল ঝোঁক তাঁর ছেলের। এসব যাতে না করে, সেই জন্য একটা সময় পাড়ার লোকজন দিয়ে ভয় দেখানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তনুজাদেবী বলেন, ‘ও যা বলবে সেটা করেই ছাড়বে’।

debangshu bhattacharya tmc

এদিকে কাজের সূত্রে এখন প্রায়ই বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হয় দেবাংশুকে। ছেলের জন্য মাঝেমধ্যেই মন খারাপ হয় তনুজাদেবীর। সেই সঙ্গেই মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে ভয়! দেবাংশুর মা বলেন, ‘ছেলেটা বাড়ি থেকে দূরে থাকে। কান্না পায়, কষ্ট হয়, আবার ভয়ও লাগে। সব মায়েদের যেমন চিন্তা হয়, আমার তাই। ও দলের হয়ে মুখ খোলে, এত কিছু বলে। আমার ভয় লাগে। এখন তো নিরাপত্তা পেয়েছে। একটা সময় এসব ছিল না। ওঁর লড়াই দেখে ভালোলাগে। আমার ছেলেকে এত মানুষ ভালোবাসে, গর্ব হয়’।

বাংলার মানুষের কাছে দেবাংশু নামে পরিচিত হলেও, বাড়ির লোকের কাছে তিনি বুম্বা। ছোট থেকেই নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। সেই ইচ্ছা থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা। তবে ছেলেবেলা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচুর শ্রদ্ধাও করেন দেবাংশু। তনুজাদেবী জানান, ‘ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ার সময় থেকেই দেখতাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ওঁর ভীষণ শ্রদ্ধা। দল, রাজনীতি এসব বিষয়ে কিছুই বুঝতো না। এরপর আস্তে আস্তে সমাজমাধ্যমে লেখা শুরু করল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনীতি ওঁকে আরও আকৃষ্ট করতে শুরু করলো’।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক আন্দোলন দেখে বড় হওয়া দেবাংশু এখন তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী। ওয়াকিবহাল মহলের কথায়, এই আসনে জোড়াফুল ফোটানো সহজ হবে না। বিজেপি এবং সিপিএম-ও এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছে। গেরুয়া শিবির দাঁড় করিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে এবং সিপিএম টিকিট দিয়েছে তরুণ আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কঠিন আসনে ছেলেকে দাঁড় করিয়েছে দল। দেবাংশুর মাকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলেন তিনি বলেন, ‘কঠিন আসনে লড়াই করার যোগ্য বলেই হয়তো দল ওঁকে নির্বাচিত করেছে, ওঁর ওপর আস্থা রেখেছে’।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরের পর সাংবাদিকতা শুরু। বিগত প্রায় ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর