রবীন্দ্রভারতী ইস্যুতে রোদ্দুর রায়ের সমর্থনে মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ছবিটা একেবারেই অশ্লীল। যা দেখার পর থেকেই একটাই শব্দ ঘুরছে সংস্কৃতিমহলে। রবীন্দ্রভারতীর এবারের দোল উৎসব রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। ছাত্রছাত্রীদের গায়ে আবির দিয়ে লেখা অশ্লীল শব্দ।  যার প্রতিবাদে গর্জে উঠছে বাংলার সংস্কৃতিমনস্করা। অভিযুক্তরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত, ইতিমধ্যেই সে তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও একটাই প্রশ্ন উঠছে যে, কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে আমাদের সংস্কৃতি? একদিকে যখন নেটদুনিয়া রবীন্দ্রভারতী ইস্যু নিয়ে সরগরম। তখন সংশ্লিষ্ট ইস্যুর হয়ে সুর চড়ালেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। মুখ খুললেন রোদ্দুর রায়ের সমর্থনে।

“সোশ্যাল মিডিয়ায় গালিবাজ রোদ্দুর রায় মাদক সেবন করে গান গায়। তাঁর আবার ভক্তও তৈরি হয়। একটি চাঁদ উঠেছিল গগনের ভিডিওতে তো প্রায় ষাট লাখ লাইক পড়েছে। এর নাম বাস্তবতা। এর নাম আমাদের সময়, যেরকমই হোক।

Capture 37

সকলে তো রবীন্দ্রসংগীত বিকৃত করছে না। রোদ্দুর রায় জাতীয় লোকেরা করছে। এও একধরণের বাক স্বাধীনতা। তার যা      খুশি সে তা বলছে, যেভাবে গান গাইতে ইচ্ছে করে, সেভাবে গাইছে। তার কিছু ভক্ত যদি শরীরে তার আওড়ানো অশ্লীল শব্দ এঁকে ঘোরাফেরা করে, তাতে কার কী?” প্রশ্ন ছুঁড়েছেন তসলিমা নাসরিন।

রবীন্দ্রভারতীর দোল উৎসব বিতর্কে তসলিমা যে শুধু রোদ্দুর রায়ের সমর্থনেই কথা বলেছেন, তা কিন্তু নয়! বিঁধেছেন সমাজের চিন্তাধারাকেও। আজকের সমাজব্যবস্থা, মানুষের চিন্তাধারণাও অনেকাংশে এর নেপথ্যে দায়ী। আধুনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখি, পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করার চেষ্টা করি।

কিন্তু পশ্চিমী এই দেশগুলিতে যখন কথায় কথায় কিছু অশ্লীল শব্দ ব্যবহৃত হয়, তখন সেগুলোকে অনুকরণ করে প্রকাশ্যে একটি মেয়ের গায়ে যা লেখা হয়েছে, তো নিয়ে এখন দ্বিচারিতা কেন? উদার মানসিকতা কোথায়? খানিক ব্যাঙ্গাত্মকভাবেই সমাজের মুখে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন লেখিকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সদ্য ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে দেখা গিয়েছে, চারজন তরুণী পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে। তাদের পিঠে আবির দিয়ে লেখা ইউটিউবার রোদ্দুর রায়ের বিকৃত রবীন্দ্রসংগীত ‘..চাঁদ উঠেছিল গগনে’।

https://www.facebook.com/nasreen.taslima/posts/1938302932980822

লেখিকার কথায়, “সে মনে করে দারিদ্র অশ্লীল, প্রতারণা অশ্লীল, ঘৃণা অশ্লীল, হত্যাকাণ্ড অশ্লীল, যুদ্ধ অশ্লীল। সে মনে করে মানুষের তৈরি শব্দ অশ্লীল নয়। শব্দ কারও ক্ষতি করে না। যে ভদ্রলোকেরা এই শব্দগুলোকে অশ্লীল বলছে তাদের অনেকেই হয়তো মনে মনে এইসব শব্দ বহুবার উচ্চারণ করে। ঘরে অথবা বাইরে বলে। কিন্তু লেখে না। বাইরে একটা নকল সমাজ, নকল সাজ, নকল হাসিই দেখতে চায় সবাই।

১০০ বছর আগে যেমন ভাবে মানুষ চলত, যেমন ভাবে বলত, তেমনভাবে আজও চলুক-বলুক চায়। আগের মতো কেন সবকিছু থাকবে। বদল কিন্তু সবসময় ভালোর দিকে যায় না, খারাপের দিকেও যায়। বদলটা মনের মতো না হলে কান্নাকাটি করার তো দরকার নেই। বুঝতে হবে এই সমাজ এই মানসিকতা হঠাৎ আকাশ থেকে পড়েনি। একেই আমরা সকলে মিলে একটু একটু করে তৈরি করেছি।”

 

সম্পর্কিত খবর