বাংলা হান্ট ডেস্ক : তাসলিমা নাসরিন। তিনি বরাবরই বাংলাদেশের প্রতি তার আবেগ বর্ষণ করেছেন বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে। নিজ দেশকে খুব মিস করেন বলেও এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি সেগুলো মেনে নিতে পারেন না। আর যার জন্য বিজয় দিবসে তিনি বিস্ফোরক দাবি করলেন।
“বিজয় দিবস নিয়ে প্রতিবছরের মতো আদিখ্যেতা শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশে। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ তারা পেয়েছে। মরি মরি! যে দেশে মেয়েদের সমানাধিকার পাওয়ার স্বাধীনতা নেই, নিরাপত্তা পাওয়ার স্বাধীনতা নেই, যে দেশে দরিদ্রের শিক্ষা স্বাস্থ্যের স্বাধীনতা নেই, অন্ন বস্ত্রের স্বাধীনতা নেই, সংখ্যালঘুর স্বাধীনতা নেই, যে দেশে বাক স্বাধীনতা নেই, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ইসলামের সমালোচনা করার স্বাধীনতা নেই, সরকারের ভুলকে ভুল বলার স্বাধীনতা নেই, সে দেশ আবার কেমন স্বাধীন। পতাকা উড়িয়ে আর বাধা কিছু বুলি কপচিয়ে ব্যর্থতাগুলো ঢেকে রাখা হচ্ছে বছরের পর বছর । পাকিস্তান আর বাংলাদেশে সত্যিই কি কোনও পার্থক্য আছে? ও দেশের মুক্তচিন্তকরা নির্বাসনে, এ দেশেরও। ওদেশে ইসলামতন্ত্র গণতন্ত্রের চেয়েও জনপ্রিয়। এ দেশেও। মসজিদ মাদ্রাসা, টুপি দাড়ি বোরখা হিজাবে ছেয়ে গেছে দেশ। পাকিস্তানের সংগে হয়তো এইটুকুই পার্থক্য, ওখানকার লোকগুলো এখানকারগুলোর তুলনায় একটু লম্বা লম্বা আর ফর্সা ফর্সা।
আজও দেশটিতে কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল, কে বিপক্ষে ছিল তা হিসেব করা হয়। ৪৮ বছর ধরে তাই হচ্ছে। কারও কারও মতে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, সুতরাং সব ভালো। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলে কি দরিদ্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো? পাটকল শ্রমিকেরা তো মরছে। এক শ্রেণীর হাতে চিরকালই টাকা, এক শ্রেণী চিরকালই আনন্দে আহ্লাদে জীবন যাপন করে, এক শ্রেণী যে সরকারই আসুক, সে সরকাররই ঘরের লোক বনে যায়। স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ অনেক বড়। অর্থ না বুঝে শুধু স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে চেঁচালেই মানুষ স্বাধীন হয় না। দেশ ভর্তি ধর্মের, পুঁজিবাদের, স্বৈরতন্ত্রের শেকলে বন্দি পরাধীন লোকেরা আজ সারাদিন স্বাধীনতার গান গাইছে। গানগুলো বড় বেসুরো ।”