বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান, মুসলিম তার নয়ন- মনি, হিন্দু তাহার প্রাণ।।” ছোট থেকে আমরা শিখেছি হিন্দু মুসলিমে কোন ভেদাভেদ নেই। কিন্তু তবুও আমাদের সমাজ থেকে ধর্ম বৈষম্য এখনো কাটেনি। প্রায়শই খবর আসে হিন্দু ও মুসলিম দাঙ্গা। এটা কোথায় কেউ মেনে নিতে পারেন না যে হিন্দু ও মুসলিমের শরীরে এক রক্ত বইছে। ধর্ম মানুষের সৃষ্টি। প্রত্যেকদিনই খবরের শিরোনামে উঠে আসে হিন্দুদের প্রতি মুসলিমদের বিদ্বেষ বা মুসলিমদের প্রতি হিন্দুদের বিদ্বেষ। আমরা এটা মেনে নিতেই পারিনা আমাদের শত্রু আসলে কেউই নয় আমরা চাইলে ধর্ম জাত সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসাথে থাকতে পারি।
বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ইসলাম ধর্মের মেয়ে হয়েও কট্টরপন্থী ইসলাম ধর্মকে সমর্থন করেনি বরং বিশ্বাস করেন ধর্মের উপরে মানুষ সত্য। তিনি তার বিতর্কিত লেখার জন্য ২৫ বছর আগেই বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন। বর্তমানে ভারতের বাসিন্দা। বেশ কিছুদিন ধরে এ ভারতে শোনা যাচ্ছে ভারতকে হিন্দু দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিদেশ করে তোলা হচ্ছে আবারো হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে।এ নিয়ে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট থেকে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন তসলিমা নাসরিন।
“সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম যে রাষ্ট্রে, সে রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে যাদের আপত্তি নেই, তাদের কেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু যে রাষ্ট্রে, সেই রাষ্ট্রকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে আপত্তি?
পৃথিবীতে প্রচুর মুসলিম রাষ্ট্র, প্রচুর খ্রিস্টান রাষ্ট্র। একটি দু’টি রাষ্ট্র হিন্দু হলে অসুবিধেটা কোথায়? জগত জুড়ে একেশ্বরবাদের আধিপত্য। বহুঈশ্বরবাদ পাশাপাশি টিকে থাকুক। সব কিছুর বৈচিত্র চাই, ধর্মেরও তো বৈচিত্র দরকার।
হিন্দুদের অনেকেই মুসলিমকে একমাত্র শত্রু বলে ভাবে। হিন্দু রাষ্ট্রে বাস করলে নিজেদের ধর্মের নারীবিদ্বেষ, জাতপ্রথা, আর কুসংস্কার বড় বেশি চোখে পড়বে, তখন এগুলোকেই তারা শত্রু বলে বিচার করবে, এগুলোর বিরুদ্ধেই তারা প্রতিবাদ করবে। এভাবেই তো সমাজ আধুনিক হয়, এভাবেই তো মানুষ সভ্য হয়।
মুসলিমদের অনেকেই আমেরিকাকে, খ্রিস্টানকে, ইহুদিকে, হিন্দুকে শত্রু বলে ভাবে। যদি ওদের শত্রু ভাবা বন্ধ করতো, তাহলে দেখতো, মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শত্রু আসলে ইসলাম।
খ্রিস্টানরা ধর্মান্ধ হতে হতে একসময় উঠে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে দূর করেছে। সেক্যুলার হয়েছে। উদার হয়েছে। মানবাধিকার সনদ তৈরি করেছে ধর্ম বর্ণ জাত লিংগের উর্ধে উঠে।
এক একটা মুসলিম রাষ্ট্র মৌলবাদি জন্ম দিচ্ছে বটে, মুক্তচিন্তকও কিন্তু কম জন্ম দিচ্ছে না। মুসলিমরা যেখানে সংখ্যালঘু, সেখানে মুক্তচিন্তকের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে।
সেই মুতাজিলা আমলে সভ্য ছিল হয়তো মুসলিমরা, মাঝে মাঝে কোনও রাষ্ট্রনেতা এসেও সমাজের বড় সড় সংস্কার করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, ফের কোনও কূপমণ্ডুক এসে আলোকিত সমাজকে হাজার বছর পেছনে ঠেলেছেন। এভাবেই চলছে। পেণ্ডুলামের মতো।
হিন্দুরা হিন্দুরাষ্ট্র চাইলে আমরা বাধা দেওয়ার কে?”