বাংলাহান্ট ডেস্ক:ভারতের আসামে প্রকাশিত হয়েছে চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জিকা। চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ। বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন আসামের নাগরিক পঞ্জিকা নিয়ে নিজস্ব মতামত রেখেছেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট থেকে।
তসলিমা বলছেন, “ভারতে নাগরিক পঞ্জী তৈরি হচ্ছে। আসামে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১২ লক্ষ বাঙালি হিন্দু, আর ৫ লক্ষ বাঙালি মুসলমান। এদের ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে। কিন্তু হিন্দুরা যেহেতু বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছে, তাদের না হয় নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু মুসলমানদের অর্ধচন্দ্র খেতেই হবে। কত লক্ষ বাঙালি মুসলমান বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছে অর্থনৈতিক কারণে, তার সত্যি কোনও হিসেব নেই। পাশে যদি খুব -গরিব দেশ থাকে, সেই দেশ থেকে কম- গরিব দেশে মানুষ ঢুকবেই। এ মানুষের নিয়ম। আমাদের আদি নারী- পুরুষেরা আফ্রিকার ইথিওপিয়া থেকে ভালো খাদ্য,ভালো পানীয়, ভালো আবহাওয়া,ভালো পরিবেশের সন্ধানে স্থান বদলেছে। না বদলালে হয়তো মানুষ প্রজাতিটাই বিলুপ্ত হয়ে যেত। বাংলাদেশ থেকে বাঙালি হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সুযোগ পেলে চলে যায় ইউরোপ- আমেরিকায়। যারা ওই সুযোগটা পায় না, তারা যায় এশিয়ার ধনী দেশগুলোয় স্থায়ী বসবাসের জন্য। যাদের দুটোর কোনও সুযোগই মেলে না, তারা যায় মধ্য প্রাচ্যে বাস করতে। আর একেবারেই যারা অভাগা হতদরিদ্র, তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেই চলে আসে, যদি কাজকর্ম করে ভালো কিছু উপার্জন করতে পারে, যদি খাওয়া পরাটা চলে, যদি স্বাস্থ্য শিক্ষাটা নির্বিঘ্নে পায়। দুনিয়ার মানুষ এভাবেই ভালো জীবন যাপনের জন্য এক জায়গা ছেড়ে আরেক জায়গায় যায়। সেই যে চার পা ছেড়ে দু পায়ে দাঁড়ানোর পর থেকে শুরু হয়েছে, আজও চলছে। ভারতীয়রাও তাই করে। তারাও ভারতের চেয়ে ভালো দেশগুলোতে পাড়ি দেয় উন্নততর জীবনের জন্য। আফ্রিকার এবং এশিয়ার বিভিন্ন গরিব দেশের লোকদের , তাদের মধ্যে ভারতীয়ও আছে, প্রায়ই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে ঘোষণা করে পাশ্চাত্যের সরকার। তারপর একসময় সবাইকেই মানবিক কারণে বৈধ বসবাসকারী হিসেবেই মেনে নেয়। কিছুকাল পর নাগরিকত্বও দিয়ে দেয় সবাইকে। আমরা পাশ্চাত্যের অজস্র মন্দ জিনিস শিখি, কিন্তু ওদের ভালো জিনিস মোটেও শিখতে চাই না, ওদের মানবাধিকার, নারীর অধিকার, ওদের বাক স্বাধীনতা, ওদের মহানুভবতা।”