বাংলাহান্ট ডেস্ক: স্পষ্ট কথা বলতে কখনোই ডরাননি লেখিকা তসলিমা নাসরিন (taslima nasrin)। বিতর্ক হবে? হোক না! নিজের দেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর কলম থামেননি। শুধুই কি রাজনীতি, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন তিনি নেটমাধ্যমে। এবার তিনি কটাক্ষ করলেন ‘লুঙ্গি’কে।
হ্যাঁ, পুরুষদের বহু পরিচিত ঘরোয়া এই পোশাকটিকেই ‘অশ্লীল’ বলে মনে হয়েছে তসলিমার। তাঁর বক্তব্য, ‘ভারতীয় উপমহাদেশে যে পুরুষেরা লুঙ্গি পরে, তাদের বেশির ভাগই কোনও আণ্ডারওয়্যার পরে না, লুঙ্গিটাকে অহেতুক খোলে আবার গিঁট দিয়ে বাঁধে। কখনও আবার গিঁট ঢিলে হয়ে হাঁটুর কাছে বা গোড়ালির কাছে চলে যায় লুঙ্গি। তাছাড়া লুঙ্গি পরার পরই শুরু হয় তাদের অঙ্গ চুলকানো।’
ব্যাপক ভাইরাল হয় তসলিমার এই মন্তব্য। অনেকেই রে রে করে উঠেছেন লুঙ্গিকে অশ্লীল বলায়। অনেকের সমর্থনও অবশ্য পেয়েছেন লেখিকা। বিষয়টা নিয়ে মাতামাতি শুরু হতেই ফের কটাক্ষ শানিয়েছেন তসলিমা। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখেন তিনি। কিন্তু ‘মজাচ্ছলে’ লুঙ্গি নিয়ে লিখতেই পুরুষজাতি ক্ষেপে গিয়েছে, রসিকতা লেখিকার।
তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের উপমহাদেশীয় সমাজের অধিকাংশ পুরুষ বিশ্বাস করেন ধর্ষণের কারণ মেয়েদের পোশাক। তাঁরাও সরবে না হলেও নীরবে বিশ্বাস করেন মেয়েদের পোশাকের কারণেই ধর্ষণ ঘটে, যাঁরা আজ বলছেন পুরুষের লুঙ্গি নিয়ে কথা বলার অধিকার কোনও মেয়ের নেই। আমি লুঙ্গি নিয়ে কথা বলার স্পর্ধা দেখিয়েছি বলে আমাকে নানা ভাবে হেনস্থা করছেন।’
তসলিমা আরো লেখেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি পুরুষের পোশাক লুঙ্গি’। তাঁদের কোনও ধারণা নেই যে বাঙালি পুরুষের নির্দিষ্ট কোনও পোশাক নেই। পোশাকের বিবর্তন প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। প্রাচীনকালে বাংলার পুরুষেরা গাছের বাকল পরতো। পরে কার্পাস তুলোর সুতোয় বানানো সেলাইবিহীন ল্যাংগোট পরতো। আরও পরে এসেছে ধুতি, তখন খাটো ধুতি পরতো। লুঙ্গি তো এই সেদিনকার।’
এরপরেই লেখিকার ব্যঙ্গ, অনেক বিজ্ঞ মানুষজন তাঁকে বলেছেন, সমস্যাটা পুরুষের পোশাকে নয়। বরং মানসিকতায়। তারা লুঙ্গি পরলেও যে অশ্লীলতা করতে পারে, প্যান্ট পরেও সেটা পারে। কিন্তু ‘নারীবিদ্বেষী’ পুরুষের এই মানসিকতা জানতে বাকি নেই তসলিমার।
তবে লুঙ্গিকে তাঁর অশ্লীল বলে মনে হলেও আইনত নিষিদ্ধ করার দাবি তসলিমা জানাননি। বরং আর্জি জানিয়েছেন, লুঙ্গির সঙ্গে অন্তর্বাস পরতে। যদিও লেখিকার মতে, বাঙালি নারীদের শাড়ি যেভাবে বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে তাতে অচিরে লুঙ্গিরও তেমনটাই দশা হবে।