বাংলা হান্ট ডেস্ক : গতকাল ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। ভারতের ইতিহাসে এক অভিশপ্ত দিন এটি। আজ থেকে ২১ বছর আগে এই দিনেই ঘটেছিল গোধরা হত্যাকাণ্ড (Godhra Hindu Massacre)। ৫৯ জন নিরপরাধ মানুষকে ট্রেনের মধ্যে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জ্বলন্ত ট্রেনের মধ্যে থেকে যাতে তাঁরা বেড়িয়ে আসতে না পারেন তার জন্য বাইরে থেকে ছোঁড়া হয় পাথর। আজও সেই হতভাগ্য মানুষগুলির হাহকারে কেঁপে ওঠে গোধরা। নারকীয় সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এদিন বিস্ফোরক দাবি করলেন বিজেপির প্রবীণ নেতা তথাগত রায় (Tathagata Roy)। গোধরা হত্যাকাণ্ড থেকে গুজরাট দাঙ্গা, পুরো ঘটনারই একটা স্মৃতিচারণ করলেন তিনি।
আজ গুজরাটের গোধরা স্টেশনে ঘাঞ্চি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক দ্বারা ৫৯ জন নিরপরাধ অযোধ্যা-ফেরত করসেবককে (নারী ও শিশু সমেত) জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ২১ বছর হল।
ভারতভূমিতে সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার ঘটনা এই প্রথম নয়। যেটা প্রথম তা হল এর প্রতিক্রিয়া।
এর আগে সাধারণ চিত্রটা ছিল এইরকম: প্রথমে— Tathagata Roy (@tathagata2) February 27, 2023
নিজের টুইটার হ্যাণ্ডল থেকে একের পর এক টুইট করে তথাগত রায় গোধরা হত্যাকাণ্ড নিয়ে তীব্র নিন্দা ব্যক্ত করেন। তিনি লেখেন, ‘আজ গুজরাটের গোধরা স্টেশনে ঘাঞ্চি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক দ্বারা ৫৯ জন নিরপরাধ অযোধ্যা-ফেরত করসেবককে (নারী ও শিশু সমেত) জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ২১ বছর হল। ভারতভূমিতে সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার ঘটনা এই প্রথম নয়। যেটা প্রথম তা হল এর প্রতিক্রিয়া।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আক্রমণ হবে, চলবে দু’এক দিন। তারপর শান্তি কমিটি হবে, শান্তি মিছিল হবে, ‘ভাইচারা’ হবে।যেটা হবে না সেটা হল আক্রমণকারীদের শাস্তি। ইতিমধ্যে আক্রমণকারীরা তো নিজেদের হাতের সুখ করে নিয়েছে! এবার তা হয় নি। প্রচন্ড এবং ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হল। সঙ্গে সঙ্গে যারা এই
হত্যাকান্ড পরিকল্পনা করেছিল এবং এরকম প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করে নি তারা চিল-চিৎকারে ফেটে পড়ল। তারা মাথার চুল ছিঁড়তে লাগল, রাস্তার মোড়ে মোড়ে অন্তর্বাস পরে নাচতে লাগল।যেন দেশে এর আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় নি, দিল্লী, ভাগলপুর মোরাদাবাদ হয় নি।’
তথাগতবাবুর লেখনীতে উঠে এসেছে বর্তমান প্রদানমন্ত্রী তথা তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা। তিনি লেখেন, ‘ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষিপ্র হাতে দাঙ্গা দমনের ব্যবস্থা করছেন (যতই বিতর্ক হোক)। সেই সঙ্গে কিন্তু একটি উক্তি করলেন, যা তাঁর নিজের নয়, অনেক শতাব্দী আগে লেখা নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র To every action there is equal and opposite reaction, ক্রিয়া হলে তার প্রতিক্রিয়া হবেই। ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে এটি কত বড় উক্তি তা বুঝতে আমাদের সময় লাগবে। এই এক উক্তিতে মোহনদাস গান্ধীর একতরফা প্রেম বিতরণের তত্ত্ব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। প্রমাণ হয়ে গেছে যে হিন্দুরা পিটুনি খাবার জন্য জন্মায় নি, হিন্দুর গায়ে হাত তুললে ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া হবে।’
২৭ ফেব্রুয়ারি’২০০২ সালে গুজরাটের গোধরা এলাকায় আগুন লাগানো হয় সবরমতী এক্সপ্রেসে। ওই ট্রেনের ঝলসে যাওয়া এস৬ কামরায় থাকা ৫৯ হিন্দু যাত্রীর মৃত্যু হয়। ট্রেনে অগ্নিসংযোগ এবং পরবর্তী উত্তেজনার মধ্যে ৩ দিন ধরে গুজরাট জুড়ে প্রাণ যায় ৭৯০ মুসলিম ও ২৫৪ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের। এই প্রেক্ষাপটে এক লক্ষ মুসলিম ও ৪০ হাজার হিন্দু ঘর ছাড়া হন। এখনও নিরুদ্দেশ ১৩০ জন। গুজরাট সরকার নিযুক্ত নানাবতী কমিশন ঘটনার তদন্ত করে জানায়, ট্রেনের কামরায় আগুন লেগে যায়নি, লাগানো হয়েছে।
গান্ধীনগর ফরেন্সিক স্টাডিজ ল্যাবরেটরির তৎকালীন ডিরেক্টর মহিন্দর সিং দাহিয়া তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘কামরার প্যাসেজে ৭২ নম্বর সিটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কোন এক ব্যক্তি প্রায় ৬০ লিটার দাহ্য তরল ঢেলে দেন কামরায় এবং তারপরই আগুন জ্বলতে শুরু করে।’