অমিত সরকার: রাজনীতির ইতিহাসে শিক্ষক সম্প্রদায় একটা বড় ভূমিকা গ্রহণ করে বারবার। দাড়ভিট কাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসেছিল রাজনীতি।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের শিক্ষক রাজকুমার রায় একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন। ভোটকেন্দ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। বিভিন্ন জেলায় ভোট কর্মীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন
অপরদিকে দিনের আলোয় বাড়িতে ঢুকে খুন করা হয় স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি মণ্ডল পাল ও তাঁর ৬ বছরের ছেলে বন্ধুঅঙ্গন পালকে। বিউটি মণ্ডল অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বন্ধুপ্রকাশ পাল তাদের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করেছে আরএসএস।
রাজ্যপাল, ”ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে একটা বিবৃতি দেওয়া হল না। নীরবতাই বলে দিচ্ছে তদন্তের গতিপ্রকৃতি।” এদিন রাজ্যপাল উষ্মাপ্রকাশ করে জানান,”আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদে একটা ভয়ঙ্কর খুন হয়েছে। মানবিকতাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। শিক্ষক, তাঁর স্ত্রী ও ৮ বছরের ছেলেকে খুন করা হয়েছে। কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি রাজ্য প্রশাসন। এটা খুব গুরুতর ব্যাপার। আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আবেদন করেছি, স্বচ্ছ তদন্ত করুন।” তিনি আরও বলেন,”ভাবুন আমাদের কারও সঙ্গে ঘটনাটা ঘটলে! মানবিকতা আজ কোথায়? হিংস্র, ভয়ডরহীন হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীরা। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত। নীরবতাই বলে দিচ্ছে তদন্তের গতিপ্রকৃতি। এটা ঠিক নয়। আমরা মানবিকতা হারাতে পারি না।”
কলকাতারাজ্য কাশ্মীরে কিছু হলে বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেন। অথচ একজন শিক্ষক,তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ৮ বছরের সন্তান খুনের ঘটনায় নীরব,অপর্ণা সেনদের খোচা বিজেপির।
অথচ আরএসএস কর্মী, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ৮ বছরের সন্তান খুনের ঘটন প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবদিহি চেয়েছে তারা।
জিয়াগঞ্জের স্ত্রী পুত্র সহ শিক্ষক খুনের ঘটনাকে পারিবারিক খুন আখ্যা দিয়ে রাজ্যে বিজেপি অশান্তি বাতাবরন চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদের ঘটনাটি একটি পারিবারিক ঘটনা।তা নিয়ে এত অপপ্রচার কেন?’ সাফ জানিয়ে দিলেন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্য জুড়ে তীব্র ক্ষোভ, আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেখানে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীর এরূপ মন্তব্যে ক্ষোভ আরো বেড়েছে।
এর প্রেক্ষিতেই বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন,”জিয়াগঞ্জে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। অন্তঃসত্ত্বা, ৮ বছরের সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কী কারণ জানি না। বন্ধুপ্রকাশ পাল স্বয়ংসেবক ছিলেন। তার কয়েক দিন আগে আরএসএসের একটি সভায় অংশ নিয়েছিলেন। তারপরই সপরিবারে তাঁকে খুন করা হল। পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা কী অবস্থায় আছে, তা আমরা জানি। একজন প্রাথমিক শিক্ষক নৃশংসভাবে খুন হচ্ছে অথচ মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত। ওনাকে জবাব দিতে হবে।”