বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাড়িতে অংকের হোময়ার্ক করতে পারেনি সে। তাই শাস্তি হিসাবে জুটলো মার। কিন্তু সেই মারের চোটেই হাসপাতাল পর্যন্ত দৌড়তে হলো এক ছাত্রকে। দিদিমণির মারে হাতে পায়ে দগদগে কালশিটে পরে গেছে ওই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের। অভিযোগ, হোমওয়ার্ক না করায় ছোট্ট হাত দু’টোর এমন অবস্থা করলেন দিদিমণি। অভিযোগের তীর কলকাতা শহরের নাম করা স্কুল যোধপুর পার্ক বয়েজের (Jodhpur Park Boyes School) দিকে। ছাত্রের মা জানান বাড়ি ফেরার পরই ছেলে বমি করতে শুরু করে। ভয়ে সে আর স্কুলে যেতেও চাইছে না এখন। এরপরই ছেলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে হাজির হন মা। পাশাপাশি লেক থানাতেও দায়ের করা হয় অভিযোগ।
ওই ছাত্রটি বলে, ‘দিদিমণি অঙ্কের খাতা দেখছিলেন। আমার হোমওয়ার্কটা করতে পারিনি। তাই দিদিমণি মেরেছেন। খুব লেগেছে আমার।’ ছাত্রের মা বলেন, দিদিমণি, মাস্টারমশাইরা তো শাসন করবেনই। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তা বলে এইভাবে?’ তাঁর কথায়, বাচ্চারা না পড়ে দুষ্টুমি করলে ওঁরাই তো শাসন করবেন। সেটাই তো উচিত। আমরা মা, বাবারাও তো শাসন করি সন্তানকে।
আমরাও চাই স্কুলে কড়া শাসনটা জারি থাক। এর আগেও ছোট-বড় কিছু স্কুলে হলে আমি স্কুলে যাইনি। আমি জানি আমার বাচ্চারই ভুল। উনি শাসন করেছেন। সে কারণে ছেলে আমার সঠিক পথেই চলবে। কিন্তু শাসনের মাত্রা যদি এতটা হয়, তারপর আমরা আর কোন ভরসায় আমাদের ছেলেকে স্কুলে পাঠাই বলুন তো? কাল যে এর থেকে আরও বেশি কিছু হবে না আমার বাচ্চার, তার কি নিশ্চয়তা আছে?’
ছাত্রের বাবা বলেন, তাঁর স্কুলের বিরুদ্ধে কোনও রকম অভিযোগ নেই। শহরের অন্যতম নামকরা স্কুল এটি। পঠনপাঠনও সেখানে বেশ ভাল হয়। সে কারণেই ছেলেকে ভর্তি করেছেন। তিনি প্রশ্ন করে, ‘ম্যাডাম এটা কেন করলেন? উনি তো অন্য কোনও শাস্তি দিতে পারতেন।’ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই ধরনের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। করোনা মহামারির সময় স্কুল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল।
মাঝে গরমের ছুটিও অনেকটা লম্বা ছিল। আমরা চাই, ছাত্ররা বেশি করে স্কুলে আসুক। স্কুলের যে একটা আলাদা জীবন আছে, সেটা ওরা উপভোগ করুক। সেখানে এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটল আমাদের স্কুলেই, এটা সত্যিই খারাপ লাগার। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আমাদের স্কুলে আর না ঘটে তার জন্য সমস্তরকম পদক্ষেপ করব।’
এদিকে জানা যাচ্ছে, থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই ওই ছাত্রের বাড়িতে যান অভিযুক্ত শিক্ষিকা। বলেন, আঘাত এতটা গভীর জেনে তিনিও নাকি কষ্ট পেয়েছেন। কথা বলতে বলতেই পড়ুয়ার মাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যতটা ও আপনার সন্তান, ততটাই ও আমারও সন্তান।’ যদিও সংবাদমাধ্যমের সামনে এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি ওই শিক্ষিকা।