বাংলাহান্ট ডেস্কঃ লকডাউনে ভিন্রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রের বা ছোট ছোট উদ্যোগের অনেক শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন, আবার হয়তো বা কেউ চিকিৎসা করাতে, কেউ পড়তে, কেউ বেড়াতে। লকডাউনের আগে দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন কাজে গিয়ে আটকে পড়া এমন মানুষদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে নিউ ব্যারাকপুর (New Barrackpore) পুরসভা। পুর এলাকায় বাড়ি, বাইরে গিয়ে লকডাউনে আটকে বিপাকে পড়েছেন, এমন মানুষদের তালিকা তৈরি করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভার তরফে এমন উদ্যোগের নজির রাজ্য তো বটেই, দেশেও সম্ভবত এই প্রথম। ইতিমধ্যেই ৯৪ জনের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়ে গিয়েছে। টাকা পেয়ে ভিন রাজ্য থেকে অনেকেই নিউ ব্যারাকপুরের বাড়িতে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছেন।
পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তরুণ নন্দী শাড়ির ব্যবসা করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন উত্তরপ্রদেশে। ১০ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত সরকার ও সঞ্জীব মজুমদার চিকিৎসার জন্য গিয়ে আটকে মুম্বইয়ে। কর্নাটকে আটকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্জয় দাস। বেড়াতে গিয়ে অসমের ডিব্রুগড়ে আটকে রয়েছেন সরোজকুমার রায়। সেলাইয়ের কাজে গিয়ে মুম্বইয়ে ফেঁসে দীপ সেন। নিউ ব্যারাকপুর পুর-এলাকার এমন অনেক বাসিন্দাই বাইরের রাজ্যে আটকে রয়েছেন। রয়েছেন শ’খানেক শ্রমিকও।
উত্তরপ্রদেশে আটকে থাকা তরুণ নন্দী বলেন, ‘এই সময়ে অল্প হলেও টাকার খুব প্রয়োজন ছিল। ট্রেনের টিকিট কাটার অপেক্ষায় রয়েছি।’ মুম্বইয়ে ফেঁসে যাওয়া দীপ সেনের বক্তব্য, ‘টাকাপয়সা শেষ। বাড়ি ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এক হাজার টাকা নিয়েই এ বার কোনও একটা গাড়ি ধরে বাড়ি ফিরব।’
এই অবস্থায় এই সব মানুষের তালিকা তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেন শাসকদলের কাউন্সিলররা। তাঁরাই এলাকায় ঘুরে ঘুরে নাম সংগ্রহ করেন। পুলিশকে নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিংও চলে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত আটকে পড়া ১০৬ জনের পরিবার পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ৯৪ জনের অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
প্রযুক্তিগত সমস্যায় আট জনের অ্যাকাউন্টে এখনও টাকা পৌঁছয়নি। বাকি চার জন টাকার পরিবর্তে পুরসভাকে অনুরোধ করেছেন বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে। পুরসভার চেয়ারম্যান তৃপ্তি মজুমদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান্স রিলিফ ফান্ড থেকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এখনও আবেদন করেননি, তাঁরা আবেদন করতে পারেন।’ পুরসভার দলনেতা প্রবীর সাহা বলেন, ‘যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁরা যাতে ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতে পারেন এবং ভাড়ার যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্যই এই বন্দোবস্ত।’ নিউ ব্যারাকপুর শহর তৃণমূল সভাপতি সুখেন মজুমদারের বক্তব্য, ‘পুরসভার এহেন উদ্যোগে দল সর্বতো ভাবে পাশে রয়েছে।’ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘মানুষ যাতে সঠিক পরিষেবা পায়, সেটা শুরু থেকেই করে আসছে নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা। তাদের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’