বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে বিশ্বজুড়ে চলা তেল ও গমের সঙ্কটের মধ্যে এবার বড় ধাক্কা পেতে চলেছে মিশর। এমনকি, দেশটিতে তেল ও গমের দাম দ্বিগুণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মিশরের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ মাইত। এই প্রসঙ্গে তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, মিশরে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ ডলার। আর এর ফলে তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেলে পৌঁছে গিয়েছে ১২২ ডলারে।
পাশাপাশি, গমের প্রসঙ্গে তিনি জানান, বার্ষিক হারে দেশে গম আমদানি করতে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে এখন। তাঁর মতে, তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ১২২ ডলার হওয়ার কারণে মিশরের বাজেটে ৭.২ বিলিয়ন ডলারের বোঝা বাড়বে। এছাড়াও, দেশে গম ও তেলের উৎপাদন কম হওয়ায় এগুলোর দাম ক্রমাগত বাড়ছে।
এমতাবস্থায়, বিশ্বব্যাপী গমের দাম বৃদ্ধি এবং মিশরীয় পাউন্ডের উপর চাপের ফলে দেশটির অর্থনীতিতে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলারের খরচ হবে। এর পাশাপাশি মাইত বলেন, বিনিয়োগের উপর জোর দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন কর্মসূচির অধীনে একটি নতুন সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ভারতের সাথে আলোচনা চলছে:
এর আগে গত ২ জুন, মিশরের সরবরাহ ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক মন্ত্রী আলি এল মোসেলহি বলেছিলেন যে, মিশরের সরকার ভারতের সাথে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এটি মূলত একটি সোঅ্যাপ চুক্তি (পণ্য আদানপ্রদানের চুক্তি) হতে পারে। এর আওতায় মিশর গম আমদানির পরিবর্তে ভারতে সারের মতো পণ্য রপ্তানি করবে।
সম্প্রতি, মোসেলহি কায়রোতে ভারতের রাষ্ট্রদূতের সাথেও দেখা করেছেন। জানা গিয়েছে, ভারত থেকে ৫ লক্ষ টন গম আমদানির চুক্তির প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য যে, গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভারত মিশরে গম পাঠাতে রাজি হয়েছিল। পাশাপাশি, সে দেশের সরকার সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (ইউএই), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের সাথেও গম আমদানির বিষয়ে আলোচনা করছে।
জানিয়ে রাখি যে, মিশর হল বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম একটি গম আমদানিকারক দেশ। এমতাবস্থায়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে গমের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে মিশরের ওপর। এমনিতেই, করোনার মত ভয়াবহ মহামারীর কারণে মিশর বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যেই দেশীয় বাজার থেকে তাদের মূলধন তুলে নিয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে।
এদিকে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধের আগে মিশর এই দেশগুলো থেকেই বেশিরভাগ গম আমদানি করত। কিন্তু, এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং মিশর এই সঙ্কটের মুহূর্তে ভারতের জন্য অপেক্ষা করছে। এই প্রসঙ্গে মিশরের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা মাদবৌলি সম্প্রতি বলেছেন যে, সরকার বখরি ঈদকে সামনে রেখে তাদের নীতি পর্যালোচনা করছে। পাশাপাশি, তাদের লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান দামকে স্থিতিশীল করা।