মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফোন করলেন করোনা আক্রান্ত লকেটকে, দিলেন বড় দিদি হিসাবে পাশে থাকার আশ্বাস

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ স্নেহের বন্ধন ও মানবিকতা কাকে বলে সেটা দেশবাসীকে আবারও দেখিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী (Mamata Banerjee)। দল ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষকেও যে তিনি মনে রাখেন সেটাও দেখিয়ে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন রাজধর্ম পালনে তিনি কোনও দিনই পিছুপা হবেন না। গতকালই নিজেই ট্যুইট করেছিলেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee)। জানিয়েছিলেন তিনি করোনা পজিটিভ।

সেই ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এদিন সকালে লকেটের বাড়িতে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ফোন। সাংসদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী দিলেন আশ্বাস, ‘বড় দিদি হিসেবে পাশে সবসময় আছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর সেই আশ্বাসে খুশি হয়েছেন বিজেপি সাংসদও।

mamata banerjee 1

অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে হাতেখড়ি তৃণমূলে যোগদানের মধ্যে দিয়েই। পরে দলবদলে চলে যান বিজেপিতে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়ে জিতেও যান। তার এই বিজয় চমকে দিয়েছিল রাজ্য রাজনীতির অনেককেই। কার্যত দল ছাড়ার আগে থেকেই লকেটের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তৃণমূলনেত্রীর।

দল ছাড়ার পর দুইজনের মধ্যে কোনও কথাও হয়নি, কোনও যোগাযোগও ছিল না। লকেটকে নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো কোনওদিনই সে ভাবে সরব হননি। এমনকি তৃণমূলের কোনও নেতাকেও লকেটের বিরুদ্ধে খড়গহস্থ হতেও দেখা যায়নি। এটাও জানা যায়নি লকেট ঠিক কোন কারনের জন্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। তবে লকেটকে বিজেপিতে যোগদানের পরেই মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অনেকবারই দেখা গিয়েছে। এবার সেই লকেটের কাছে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর ফোন যেতেই শোরগোল ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

তবে অনেকেই বলছেন এর পিছনে রাজনীতি খোঁজা বৃথা। কারন প্রবীণ বাম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁরও স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। অশোকবাবুর শারীরিক খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর পরিবারকে সব রকম ভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। লকেটের ক্ষেত্রেও তিনি সেই একই কাজ করেছেন। তবে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে লকেটকে তিনি এখনও ছোট বোন হিসাবেই দেখেন।

locket 1535368700 1569408391

আর তাই ছোট বোন কোনও ভুল করে ফেললে বা বিপথগামী হলে বা বিরুদ্ধ শিবিরে চলে গেলেও তাঁকে এত দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়নি যে বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো যাবে না। লকেট মুখ্যমন্ত্রীকে যতই আক্রমণ করিন না কেন কার্যত মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়ে দিলেন রাজধর্ম কাকে বলে আর স্নেহের পরশ কি জিনিস! আগামী দিনে এই স্নেহের পরশ আরও কী কী খেল দেখায় সেটা দেখার আশায় এবার বসে রইল রাজ্যবাসী।

বস্তুত লকেটের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর ফোন যেতেই উদ্বিগ্নতা ছড়িয়েছে রাজ্য বিজেপি শিবিরেও। কারণ তাঁদের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত আঘাত। মুখ্যমন্ত্রীর এই মানবিক ও অভিভাবক সুলভ পদক্ষেপ যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূলকে যদে অনেকটাই এগিয়ে দিল সে নিয়ে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভবিষ্যতে আবারও লকেট তৃণমূলে ফিরে এলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। বন্ধ দরজা আজ হুট করে খুলে দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।


সম্পর্কিত খবর