বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটছে। এমতাবস্থায়, পিছিয়ে নেই চিকিৎসা পরিষেবাও। বরং, সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে একের পর এক নজিরবিহীন সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হচ্ছে আমাদের দেশে। সেই রেশ বজায় রেখেই সম্প্রতি আরও একটি রেকর্ড সামনে এল। ২০ জন শল্যচিকিৎসক ও ১০ জন অ্যানাসথেসিস্টের সহযোগিতায় টানা ১৮ ঘন্টার চেষ্টার পর অবশেষে সফল হল দেশের প্রথম হাত প্রতিস্থাপনের অপারেশন (Hand Replacement Surgery)।
জানা গিয়েছে, কেরলের অমৃতা হাসপাতালে এই বিরল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাত ফিরে পেলেন অমরেশ নামের এক যুবক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশে এই প্রথম হাত প্রতিস্থাপনের মত জটিল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হল। শুধু তাই নয়, এর আগে সমগ্ৰ বিশ্বে মাত্র দু’বার এই অপারেশনের ঘটনা ঘটেছে। জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে বিদ্যুতের তার সারাই করতে গিয়ে একটি দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম হন অমরেশ।
এমনকি, ওই দুর্ঘটনার ফলে তাঁর দু’টি হাতই বাদ যায় শরীর থেকে। এমতাবস্থায়, হাত প্রতিস্থাপনের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও, দাতার খোঁজ না পাওয়ায় থমকে ছিল অস্ত্রোপচার। এদিকে, সম্প্রতি তিরুবনন্তপুরমে একটি দুর্ঘটনায় বিনোদ নামের এক ৫৪ বছর বয়সী প্রৌঢ় প্রাণ হারান। পাশাপাশি, বিনোদের পরিবারের সদস্যরা তাঁর অঙ্গ দান করতে রাজি হন। তারপরেই দ্রূততার সাথে বিনোদের মৃতদেহ থেকে হাত নিয়ে তা অমরেশের শরীরে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন অমৃতা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
মূলত, অমরেশের ওই দুর্ঘটনায় চিকিৎসকেরা তাঁর ডান হাতটিকে কনুইয়ের কাছ থেকে ও বাম হাতটিকে কাঁধ থেকে বাদ দেন। এমতাবস্থায়, হাত প্রতিস্থাপনের সময়ে যে হাতটি কনুইয়ের কাছ থেকে বাদ গিয়েছিল সেটির তুলনায় কাঁধ থেকে বাদ যাওয়া হাতটিকে প্রতিস্থাপিত করাটাই সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। এদিকে, পূর্বের দুর্ঘটনায় অমরেশের স্নায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় এই অস্ত্রোপচারটি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
যদিও, দীর্ঘ ১৮ ঘন্টার চেষ্টায় সম্পন্ন হওয়া সফল অস্ত্রোপচারের পর অমরেশকে নতুন হাত দিতে পেরে খুশি হয়েছেন চিকিৎসকেরাও। এদিকে, এই বিরল অস্ত্রোপচারের পর বেশ নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে অমরেশকে। টানা ১৮ মাস যাবৎ রোজ পাঁচ ঘণ্টা ফিজিয়োথেরাপি করার পাশাপাশি কোনো ভারী জিনিস নিয়ে টানাটানি করতে পারবেন না তিনি। এছাড়াও, কোনোরকম ক্ষত দেখা দিলেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে তাঁকে। যদিও, চিকিৎসকরা মনে করছেন যে, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেলে নতুন হাত দিয়ে দাঁত মাজা কিংবা ভাত খাওয়ার মত কাজকর্মগুলি নিশ্চিতভাবে করতে পারবেন অমরেশ।