অবসাদে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত, রেল লাইনে গলা দেওয়া বৃদ্ধকে দেবদূত হয়ে উদ্ধার করলেন চালক

বাংলা হান্ট ডেস্ক: মানসিক অবসাদের জেরে হারিয়ে ফেলেছিলেন সমস্ত আশা। এমনকি, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজেকে শেষ করে দেওয়ারও। সেই কারণে রেললাইন গলা দিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করছিলেন এক বৃদ্ধ। কিন্তু, ওই যে কথায় আছে “রাখে হরি, মারে কে?” নেহাতই কপালজোরে চাইলেও প্রাণ গেল না তাঁর। উল্টে পেলেন জীবনের টিকে থাকার ক্ষেত্রে ভরসা। মূলত, ওই লাইনে আসা ট্রেনের (Train) লোকো ইন্সপেক্টর চন্দন সরকারই নতুন জীবন উপহার দিলেন ওই বৃদ্ধকে।

এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, গত রবিবার আলিপুয়ারদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশনের নিউ ময়নাগুড়ি-নিউ দোমোহনীর মাঝে কোচবিহার থেকে শিয়ালদহগামী ৩১৪২ ডাউন তিস্তাতোর্ষা এক্সপ্রেস যাওয়ার সময়ে সেটির লোকো ইন্সপেক্টর ও চালক দেখতে পান যে, নিউ ময়নাগুড়ি-নিউ দোমোহনীর ৪৩/২৪ নম্বর পোস্টের কাছে এক বৃদ্ধ রেললাইনে মাথা দিয়ে শুয়ে রয়েছেন।

এই ঘটনা পরিলক্ষিত করে তৎক্ষণাৎ তাঁরা ইমারজেন্সি ব্রেকের মাধ্যমে ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে রেললাইনে শুয়ে থাকা ওই বৃদ্ধের কাছে পৌঁছে যান। পাশাপাশি, কেন তিনি এই কাজ করতে গিয়েছিলেন তাঁর কারণও জানতে চান। যার উত্তরে তিনি জানান তাঁর কাছে কাজ না থাকায় তিনি এহেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এমতাবস্থায়, তাঁর কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জেনে তাঁকে ভরসা জোগান লোকো ইন্সপেক্টর চন্দন সরকার। শুধু তাই নয়, ওই বৃদ্ধের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন “পৃথিবীটা সুন্দর। পাশাপাশি, দুঃখও সবার থাকে। তাই বলে আত্মহত্যা করবেন না।” জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম রোহিত সরকার। তিনি বাসে চেপে সেখানে এসেছিলেন। তাঁর বাড়ি চিকন মাটি এলাকায়। তবে, ওই সময়ে তাঁর কাছে কোনো পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে, এই পুরো ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে নেটমাধ্যমে। যেটি তুমুল ভাইরাল হতে শুরু করেছে। সমগ্ৰ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ওই ভিডিওটিতে। এই প্রসঙ্গে লোকো ইন্সপেক্টর চন্দন সরকার জানিয়েছেন, “প্রথমে ভগবানকে ধন্যবাদ জানাই। ওই ব্যক্তিকে রেললাইনে শুয়ে থাকতে দেখে তাঁকে বাঁচানোর তাগিদ জাগে মনে। জানতে পেরেছি তিনি মালবাজারের ক্রান্তি ময়নাগুড়ি রুটের কন্ডাক্টর ছিলেন।” এদিকে, ওই ট্রেনের লোকো পাইলট ছিলেন মনোজ কুমার রজক ও কো পাইলট ছিলেন অবদেশ মৌরিয়া। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ অসম্ভব ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর