বাংলা হান্ট ডেস্ক: আজ থেকে বছর বারো আগে বলিউডের বিগ বি অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan) “খুশবু গুজরাট কি” বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গুজরাটের (Gujarat) অপরূপ সৌন্দর্য সবার সামনে উপস্থাপিত করেছিলেন। মূলত, ওই বিজ্ঞাপনের কারণেই এশিয়াটিক সিংহের জন্য বিখ্যাত গির অরণ্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, বিগত কয়েক বছরে, গিরের আশেপাশের জঙ্গলেও পর্যটন ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। শুধু দেশ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ এখানে বেড়াতে আসছেন। এমতাবস্থায়, পর্যটকদের থাকার জন্য ওই এলাকার কৃষকরা তাঁদের নিজস্ব জমিতে হোটেল নির্মাণ করছেন।
পাশাপাশি, এর মাধ্যমে কৃষকরা ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগও পেয়েছেন। আজ আপনি গির বনাঞ্চলে থ্রি স্টার থেকে শুরু করে ফাইভ স্টার হোটেল খুব সহজেই খুঁজে পাবেন। তবে, বনসংলগ্ন এলাকায় এই ধরণের বাণিজ্যিক উন্নয়ন পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের এমন একজন কৃষকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চলেছি যিনি সময়ের সাথে সাথে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পরিবেশের বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন নি। ওই কৃষকের নাম ধনজী ভাই প্যাটেল।
ট্যুরিজম বিজনেসকে মাথায় রেখে ধনজী ভাই তাঁর ১৫ বিঘা জমির মধ্যে ৫ বিঘায় অত্যন্ত টেকসই পদ্ধতিতে একটি রিসর্ট তৈরি করেছেন। ধনজী ভাই গির সোমনাথ জেলার তালালা তালুকে অবস্থিত ভোজদে গ্রামে “অরণ্য রিসর্ট” তৈরি করেছেন। এই প্রসঙ্গে ধনজী ভাই জানিয়েছেন, “আমি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই রিসর্টটি তৈরি করেছি। আমরা যখন এখানে রিসর্ট তৈরির পরিকল্পনা করি তখনই স্থির করি যে, নির্মাণের সময় আমরা একটি গাছও কাটব না। তাই সে কথা মাথায় রেখেই পুরো পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল। এই কাজের জন্য, আমরা হিমাংশু প্যাটেলের সাথে কথা বলেছি, যিনি আহমেদাবাদে ইকো-ফ্রেন্ডলি আর্কিটেকচারের জন্য পরিচিত। তাঁর কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়।”
এই রিসর্টে মোট সাতটি কটেজ রয়েছে। যেগুলি স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। সব কটেজে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে ছাদে মাটির টাইলস বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে টাইলস তৈরিতে কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে গ্যালভানাইজড স্টিলের ফ্রেম। জানালা এবং দরজাও স্থানীয় কাঠের তৈরি। এছাড়াও, তিনি জানিয়েছেন যে, এখানকার মানুষ গির বনের গাছ সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে কম কাঠ ব্যবহার করেছে।রিসর্টে দেওয়ালের জন্য পাথরও ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে সিমেন্টের প্লাস্টারও নেই। পাশাপাশি ঘর ও বাথরুমগুলি যাতে প্রাকৃতিক আলো পায় সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। আর এই কারণেই রিসর্টের প্রতিটি ঘরে আলো-বাতাস যথেষ্ট পরিমানে ঢোকে।
করা হয়েছে খরচ হ্রাস: ধনজী ভাই জানান, রিসর্টের প্রতিটি কটেজে দু’টি করে রুম রয়েছে। একটি কটেজ তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। সাতটি কটেজ সহ পুরো রিসর্টটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৭৫ লক্ষ টাকা। সেখানে একটি সুইমিং পুলও রয়েছে। পুলটি তৈরির সময়ে যাতে ব্যবহৃত জল সরাসরি ক্ষেতে চলে যেতে পারে সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এই রিসর্টের সবচেয়ে অনন্য বিষয় হল, ধনজী ভাই এখানে খাবার তৈরির জন্য কোনো শেফ নিয়োগ করেন নি। বরং তাঁর পরিবারের সদস্যরাই এই কাজ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের রান্নার জন্য যা কিছু দরকার তা আমাদের ১০ বিঘার ক্ষেতেই উৎপন্ন হয়”। শুধু তাই নয়, ওই রিসর্টের মোট চাহিদার ৯০ শতাংশই পূরণ হয় ওই ক্ষেত থেকে। এমতাবস্থায়, ধনজী ভাইয়ের ওই অনন্য রিসর্টটি খুব সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। পাশাপাশি, ওই এলাকার অন্যতম জনপ্রিয় একটি রিসর্ট হিসেবেও বিবেচিত হয় সেটি।