বাংলা হান্ট ডেস্ক: চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই তীব্র ঠান্ডার মধ্যে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) লক্ষ্মীরানী দেবীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে ফিরেছিলেন তাঁর ছেলে। অ্যাম্বুল্যান্সের টাকা দিতে না পারায় ওইভাবেই বৃদ্ধার দেহ কাঁধে করে নিয়ে আসেন তাঁর ছেলে ও স্বামী। এই ঘটনা সামনে আসার পরই রীতিমতো তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। কিন্তু কয়েক মাস অতিক্রম করতে না করতেই ফের সেই মর্মান্তিক দৃশ্য আবারও সামনে এল।
জানা গিয়েছে, এবার কালিয়াগঞ্জে (Kaliagang)। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে না পারায় শিলিগুড়ি থেকে পাঁচ মাসের সন্তানের মৃতদেহ ব্যাগে ভরে কালিয়াগঞ্জ পর্যন্ত এলেন অসহায় বাবা। আর এই ঘটনা ফের একবার “অমানবিক” সমাজের কঠোর চিত্রকে প্রকাশ্যে নিয়ে এল। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মুস্তাফানগর গ্রামপঞ্চায়েতের ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা পেশাগতভাবে একজন পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি কেরলে কাজ করতেন।
এদিকে, তাঁর স্ত্রী যমজ সন্তানের জন্ম দেন। যদিও, পাঁচ মাস পর দুই শিশুই অসুস্থ হয়ে পড়লে একাধিক হাসপাতালে ঘুরে শেষ পর্যন্ত তাদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। এমতাবস্থায়, গত বৃহস্পতিবার এক শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতেই মৃত্যু হয় আরেকজনের। এদিকে, আর্থিকভাবে সামর্থ্য না থাকায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনো অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে পারেননি তিনি।
তারপর একপ্রকার বাধ্য হয়েই রবিবার ভোরে সন্তানের মৃতদেহ একটি ব্যাগে ভরে বেসরকারি বাসে করে রায়গঞ্জ পৌঁছন অসহায় অসীম বাবু। সেখান থেকে বাস বদল করে কালিয়াগঞ্জে আসেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জের ডাঙ্গিপাড়ায় (দূরত্ব ২২০ কিমি) আসতে ৮ হাজার টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর ছিল না।
এমতাবস্থায়, কালিয়াগঞ্জে বিবেকানন্দ মোড়ে নামার পর স্থানীয় বিজেপি নেতা গৌরাঙ্গ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অসীম। তিনিই ব্যবস্থা করে দেন অ্যাম্বুল্যান্সের। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গৌরাঙ্গ বাবু জানিয়েছেন, “এটা খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। ওই ঘটনার খবর পেয়েই মানবিকতার খাতিরে আমি একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।” এদিকে, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। পাশাপাশি পরিবারের লোকেরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন বলে জানা গিয়েছে।