বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যখন বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক উষ্কানীমূলক ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল কর্ণাটক ঠিক সেই আবহেই সে রাজ্যের একটি ঐতিহাসিক মন্দির বহু পুরনো ঐতিহ্যকে এখনও অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয়, সেই ঐতিহ্য বপন করছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বীজও।
কর্ণাটকের বেলুরে অবস্থিত এই মন্দিরটি চেন্নাকেশব মন্দির নামে পরিচিত। এই মন্দিরের ঐতিহ্য অনুযায়ী, “রথোৎসব” শুরু হয় কোরান পাঠের মাধ্যমে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ডানপন্থী সংগঠনগুলো এই প্রথা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। তবে সংগঠনের সেই দাবি উপেক্ষা করেই চলতি বছর গত ১৩ এপ্রিল থেকে মন্দিরে নির্ধারিত উৎসব শুরু হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের উপস্থিতিতে এই উৎসব শুরু হয়। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিনে বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। মন্দিরের একজন কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, “কোরান পাঠের প্রথা বহুকাল ধরেই রয়েছে এখানে। এবারও সেই রীতি অনুসরণ করা হল। তবে এবার কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল। কারণ মুসলিম ব্যবসায়ীরা মন্দিরের বাইরে দোকান বসাতে অস্বীকার করেন এবছর। কিন্তু এই প্রথা চালু রাখা হয়।”
জানা গিয়েছে ঐতিহ্য অনুসারে, এই উৎসব শুরুর আগে, একজন মৌলবী চেন্নাকেশব মন্দির প্রাঙ্গণে আসেন এবং কোরানের কিছু অংশ পাঠ করেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এবার ডানপন্থী কর্মীরা এই ঐতিহ্যের পুনরাবৃত্তি না করার দাবি জানিয়েছিলেন। মন্দির কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কাছেও এই দাবি জানানো হয়। এমনকি, ডানপন্থী কর্মীরা মন্দিরের বাইরে মুসলিম ব্যবসায়ী এবং দোকানদারদের না বসতে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিল। তবে এই দু’টি দাবিই উপেক্ষা করেছেন মন্দিরের কর্মকর্তারা।
যদিও, জানা গিয়েছে এর আগে মন্দির কর্তৃপক্ষ মুসলিম ব্যবসায়ীদের নিষিদ্ধ করেছিল। পরে, চাপের কারণে ফের সম্মতি দেওয়া হয়েছে। মূলত, রাজ্য সরকারের অধীনে আসা এনডাউমেন্ট বোর্ড মন্দির কর্তৃপক্ষকে এটি করতে বলে। এনডাউমেন্ট বোর্ডের এক আধিকারিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, “এর আগে মন্দির কর্তৃপক্ষ মুসলিম দোকানদারদের একটি নোটিশ জারি করেছিল এবং তাঁদের দোকান বন্ধ করতে বলেছিল। তবে সরকার তাঁদের এই উৎসবের অংশ হতে অনুমোদন দিয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষকে অ-হিন্দুদেরও দোকান বসানোর অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর প্রায় ১৫ জন মুসলিম ব্যবসায়ী দোকান বসিয়েছেন।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস ধরেই কর্ণাটকে হিজাব নিয়ে বিতর্ক চলছে। এমনকি, এই ঘটনার রীতিমত উত্তাল হয়ে ওঠে দেশও। এদিকে, এই বিতর্কের পর, কিছু সংগঠন আবার হালাল মাংস বর্জন এবং অ-হিন্দুদের হিন্দু মন্দিরের বাইরে দোকান বসাতে না দেওয়ার জন্যও প্রচার চালায়। এমনকি, অনেক অ-হিন্দু দোকানদারদের মারধর এবং তাঁদের গাড়ি উল্টে ফেলার খবরও পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদিউরপ্পা এই ধরনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।