বাংলা হান্ট ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের (Government of West Bengal) কোষাগারে ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে টাকা। পাশাপাশি, সরকারের আয়ও কম। তাই, খরচেও টানতে হবে রাশ। এক কথায়, কোনো অতিরিক্ত খরচ যে বর্তমানে রাজ্যের পক্ষে করা কার্যত অসম্ভব, তা ইতিমধ্যেই একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে বলতে শোনা গেছে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।তবে, কেন সরকারের কোষাগার থেকে ক্রমশ কমতে চলেছে অর্থ? এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, একের পর এক প্রকল্প শুরু করে দেওয়াতে সেখানেই জলের মত খরচ হয়ে যাচ্ছে অর্থ। কোটি কোটি টাকার ওইসব প্রকল্পের খরচের পর আর কিছুই থাকছেনা কোষাগারে। যে কারণে প্রশাসনিক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা কিছু চাইলেই জুটছে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক।
এই পরিসংখ্যান চলতি অর্থবর্ষে অমিত মিত্রের বাজেট বইয়ের দিকে তাকালেই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে যে, আপাতত রাজ্যের কোষাগারে রাজস্ব খাতে আয় হয় প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও, রাজস্ব খাতে ব্যয়ের পরিমান প্রায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ শুধুমাত্র রাজস্ব খাতেই রাজ্যে ঘাটতি থাকছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজস্ব খাতে আয় হওয়া ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আবার কেন্দ্রীয় অনুদানেরই পরিমান প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, আবগারি শুল্ক থাকে ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এদিকে, আগের ধার মেটাতেই খরচ হয়ে যায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও, কর্মীদের বেতন ও পেনশন দিতে খরচ হয় ৮০ হাজার কোটি টাকা।
এমতাবস্থায়, চলতি অর্থবর্ষে বাজার থেকে ঋণ মিলবে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, কেন্দ্রের কাছ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ মিলবে বলেও জানা গিয়েছে। অর্থাৎ, রাজস্বের ঘাটতি মিটিয়ে মোটামুটি ৬০ হাজার কোটি টাকা বাবদ হাতে থাকছে সরকারের। যদিও, এখানেই হিসেব শেষ নয়। কারণ, এই টাকার মধ্যেই আবার ভাগ বসাচ্ছে রাজ্যের জনপ্রিয় সব প্রকল্প।পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমেই শুধুমাত্র খরচ হচ্ছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও, কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু, রূপশ্রী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড সহ একাধিক সামাজিক প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
যদিও, এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, “কেন্দ্রীয় সরকার সেন্ট্রাল শেয়ারের পরিমান কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে রাজ্যের পাওনা বাবদ ৯০ হাজার কোটি টাকা এখনও পর্যন্ত আমরা পাইনি। লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মত প্রকল্পগুলিতেই হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে।”
এমতাবস্থায়, বাজেটের হিসেব এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, সরকারের কোষাগার ক্রমশ খালির পথে। উল্লেখ্য যে, ২০২২-এর শুরুতেই বিরাট অঙ্কের ধার নিয়েছিল রাজ্য। গত ৪ জানুয়ারি বাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার।