বাংলার এই পাতাল ঘরে বসেই গণপরিষদে বোমা মারার ছক করেছিলেন ভগৎ সিংহরা, বর্তমানে ভগ্নদশা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা বলতে গেলে যে দামাল ছেলেদের কথা সর্বপ্রথম উঠে আসে তাদের মধ্যে অন্যতম বটুকেশ্বর দত্ত, রাজগুরু, ভগৎ সিংরা। এই দামাল ছেলেরাই গড়ে তুলেছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন। হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে পা রেখেছিলেন তারাই। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, “বধিরকে শোনাতে হলে ধামাকা দরকার।” সালটা ছিল ১৯২৮। লাহোরে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভের ডাক দেন লালা লাজপত রাই। তাদের এই মিছিল স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে ফেলে ছিল ব্রিটিশ পুলিশকে। বিক্ষোভ থামাতে লালার ওপর চার্জের নির্দেশ দেন ব্রিটিশ অফিসার জেমস স্কট।

এই নিন্দনীয় অপরাধের শাস্তি স্বরূপ স্কটকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রাজগুরু, ভগৎ সিংরা। কিন্তু ভুল করে স্কটকে হত্যা করতে গিয়ে স্যান্ডার্সকে হত্যা করে বসেন তারা। এরপরই পাঞ্জাব ছেড়ে পালানো, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এখানে সেখানে লুকিয়ে থাকতে থাকতে অবশেষে বাংলায় পৌঁছান ভগৎ সিং। আশ্রয় নেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে। ব্রিটিশ পুলিশের চর ছিল সর্বত্রই, তাই পাঞ্জাব থেকে সুদূর বাংলাতে এসেও লুকিয়ে থাকা সহজ ছিল না।

এমতাবস্থায় তারা আশ্রয় নেন পাশেরই একটি বাড়িতে। বাড়িটি ঘোষবাড়ি নামে পরিচিত, বটুকেশ্বর জানতেন এই বাড়িতে রয়েছে একটি পাতালঘর। আর সেই পাতালঘরেই এই দুর্দমনীয় বিপ্লবীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। খণ্ডঘোষে পুলিশি তল্লাশি শুরু হলেও বিপ্লবীদের খুঁজে বের করতে পারেনি ব্রিটিশরা। তার অন্যতম কারণ এই পাতালঘরটি। পুরনো জরাজীর্ণ বাড়িটিতে এখনো ঢুকলে দেখা যাবে, দেওয়াল কেটে দু’দিকে দু’টি শোকেস করা আছে। সেখানে আগে কাঠের দরজা লাগানো ছিল। পাল্লার সামনে থাকত প্রসাধনী সামগ্রী। তাই কিছুতেই বোঝার উপায় ছিল না সেটি আসলে একটি পাতালঘরের পথ। শোনা যায়, প্রায় দিন ১৫ এই পাতালঘরে লুকিয়ে ছিলেন বিপ্লবীরা। এই পাতাল ঘরেই ব্রিটিশ গণপরিষদে বোমা ফাটানোর পরিকল্পনা করেছিলেন ভগৎ সিং। পরে সেখান থেকে তাঁরা পৌঁছান দিল্লি।

IMG 20210815 123844

ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ বলেন, “ওই পাতাল ঘরে ১৫ দিন ধরে বিপ্লবী ভগৎ সিং আত্মগোপন করেছিলেন। সেখানেই গণপরিষদে বোমা ফাটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ সেই পরিকল্পনা মতোই দিল্লির গণপরিষদে বোমা ছোড়েন বিপ্লবী ভগৎ সিং। পরে তিনি ধরা দেন। আজ ওই গ্রামে কেউ গেলেই পাতাল ঘরের খোঁজ করেন।” এখন তাদের একটাই দাবি কালে কালে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে বাড়িটি। অন্যদিকে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাড়িটি সংরক্ষণ করা হলেও এই বাড়িটির কোনরকম কোন সংরক্ষণ হয়নি। এই বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা রেখা ঘোষ বলেন, তারা চান সরকার এখানে মিউজিয়াম তৈরি করুন। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রীও সেসময় বিপ্লবীদের বাঁচাতে সাহায্য করেছিলেন। প্রচারে আসুক তাদের কথাও। শুধু তাই নয়, সরকার এই বাড়িটি গ্রহণ করলে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবেন বলেও জানান তিনি। জানা গিয়েছে সরকার এই বাড়িটি অধিগ্রহণ করার চিন্তা করছে।

 

Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর