বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সারাবিশ্ব আজও তাকে স্মরণ করে ফেভিকল ম্যান হিসেবে। গুজরাটের একটি ছোট্ট শহর মহুয়ায় দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা বলবন্ত পারেক কিভাবে হয়ে উঠলেন ফেভিকল ম্যান অফ ইন্ডিয়া, তা শুনলে আপনিও নিশ্চয়ই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠবেন। জীবনে যতই দুঃসময় আসুক না কেন, নিজের কাজে যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভাবে লেগে থাকেন অবশেষে তারাই সফল হন, বলবন্ত পারেকের জীবন এই নীতিবাক্যেরই চূড়ান্ত উদাহরণ।
গুজরাটের ভাওয়ানগর জেলার মহুয়ায় ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন বলবন্ত। সেখানেই শুরু হয় বাল্যজীবন এবং পড়াশোনা। ছোটবেলা থেকেই একজন ব্যবসায়ী হবার স্বপ্ন ছিল তার চোখে। কিন্তু পরিবারের লোকজন চাইতেন তিনি আইনজীবী হন। কার্যত পরিবারের কথা মেনেই মুম্বাইয়ের সরকারি ল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বলবন্ত। সেটা ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়, এই সময় অন্যান্য যুবকদের মতই গান্ধীজীর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। অবশ্য একবছর পরে ফের পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।
কিন্তু পড়াশোনা সম্পন্ন করলেও আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না তার। গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত বলবন্ত ছিলেন সত্য ও অহিংসার বিশ্বাসী। আইনজীবীর পেশাকে তিনি মিথ্যের ব্যবসা মনে করতেন, সেই কারণে একটি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ নেন তিনি। পড়াশোনা চলাকালীনই তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। তাই সংসারের বোঝা টানাও ছিল রীতিমতো কষ্টকর। যার জেরে কখনও প্রিন্টিং প্রেস কখনওবা কাঠের কারখানাতেও চাপরাশি হিসেবে কাজ করেছেন বলবন্ত। যদিও খুব বেশি দিন কোন কাজই করতে পারেননি তিনি। এইসময় কারখানার গুদামে কার্যত চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটছিল আগামী দিনের ফেভিকল ম্যানের।
কিন্তু নিজের কাজ থেকে সব সময় কিছু না কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বলবন্ত পারেক। আগামী দিনে তাকে প্রভূত সাহায্য করেছে। এইসময় হঠাৎই জার্মানি যাওয়ার একটি সুযোগ চলে আসে তার কাছে। জার্মানিতে গিয়ে ব্যবসা সম্পর্কিত অনেক নতুন তথ্য জানতে পারেন বলবন্ত। ফিরে এসেই প্রথম শুরু করেন পিডিলাইট কোম্পানি। এইসময় স্বাধীন হওয়ায় বেশ কিছুটা সুবিধা হয়েছিল বলবন্তর। যদিও তখন মূলত বিদেশ থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র আমদানি করে তা বিক্রি করার কাজ করত তার কোম্পানি।
কিন্তু দারিদ্র্য কাটলেও এতেও মন ভরছিল না বলবন্তর। একদিন হঠাৎই তার মনে হয়, তিনি যখন কাঠ গুদামে কাজ করতেন তখন দেখেছেন পাখির সঙ্গে কাঠ জোড়া লাগাতে ব্যবহার করা হয় পশুর চর্বি। তার দুর্গন্ধ মারাত্মক। শুধু তাই নয় ব্যবহার করতেও বেশ বেগ পেতে হয় কর্মীদের। তিনি কি কোন সুগন্ধি আঠা তৈরি করতে পারেন না যা আগামী দিনে সবাই ব্যবহার করতে পারবে? সেই সূত্র ধরেই ভাই সুনীল পারেককে নিয়ে শুরু হয় পড়াশোনা, তৈরি হয় উদ্ভিদজাত সিম্পথেটিক আঠা ফেভিকল৷ আজ এত বছর পরেও যা ভারতীয়দের কাছে চিরপরিচিত নাম।
পিডিলাইট কোম্পানির ফেভিকলের জোড় এতটাই মজবুত যে তাই এখনও ভুলতে পারেনি কেউই। তারপর ডক্টর ফিক্স-ইট, ফেভিকুইক সহ একাধিক প্রোডাক্ট তৈরি করেছে পিডিলাইট। শুধু ভারত নয় এখন আমেরিকা, থাইল্যান্ড, দুবাই, মিশর এবং বাংলাদেশেও কারখানা রয়েছে পিডিলাইটের। এই কারণে ফোর্বসের এশিয়ার সেরা ধনীদের তালিকায় ৪৫ তম স্থানে আপাতত রয়েছে বলবন্ত পারকের কোম্পানি। অবশ্য শুধু ব্যবসা নয় সমাজ সেবার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এই মহান মানুষটি। একাধিক হাসপাতাল, স্কুল তো বটেই ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে গুজরাটের ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষা নিতে পারে তার জন্য দর্শন ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি এনজিও গঠন করেন তিনি। অবশেষে ২০১৩ সালে 88 বছর বয়সে মৃত্যু হয় বলবন্ত পারেকের। ভারতকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মজবুত করতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি এখনও সকলের কাছে স্মরনীয়।