বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, আর ভারতীয় সেনা কখনও হেরে যেতে জানেনা। এমন দৃষ্টান্ত এর আগেও বারবার দেখেছি আমরা, আজ এমন একজন মানুষের জীবন কাহিনী তুলে ধরবো যিনি পাক সেনার গুলিতে হারিয়ে ফেলেছিলেন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলার ক্ষমতা, কিন্তু তার অদম্য মনোবল সমস্ত বাধাকে উপেক্ষা করে তাঁকে আবার ফিরিয়ে দেয় জয়ীর আসনে। দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন মাস পর মহারাষ্ট্রের পুণেতে জন্ম মুর্লিকান্ত পেটকরের। এখন ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে সকলেই তাঁর নাম খুঁজে পাবেন প্যারালিম্পিকসে ভারতের প্রথম সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদ হিসেবে।
তবে শুরুর দিনগুলো ছিল ভয়ঙ্কর কঠিন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল মুর্লিকান্তের। যেমন ভালো কুস্তি করতেন, তেমনই বক্সিংয়ের প্রতিও ছিল মারাত্মক আগ্রহ। সেই সূত্র ধরেই মেধাবী মুর্লিকান্তের সুযোগ এসে যায় ভারতীয় সেনায়। কর্পস অব ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারস (ইএমই)-তে ক্রাফ্টসম্যান হিসাবে যোগ দেন। একদিকে দেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন, আর সাথে সাথেই খেলার প্রতি আগ্রহ জিইয়ে রাখা। এ ভাবেই কাটছিল দিন, ভারতীয় সেনার অন্যতম জনপ্রিয় বক্সার হিসেবে তখন তার নাম সকলের কাছেই পরিচিত।
কিন্তু হঠাৎ যে এমন ঘটবে তা হয়তো ভাবতে পারেননি কেউই। সালটা ১৯৬৫। এক সকালে নিজের ক্যাম্প থেকে বাইরে এসে সেনা ক্যাম্পাসের মধ্যেই পায়চারি করছিলেন মুর্লিকান্ত। তখনই হঠাৎ বেজে ওঠে সাইরেন, বুঝতে বাকি থাকেনা সামনে বিপদ। কিন্তু বিপদ অনুধাবন করলেও ক্যাম্পে ফেরার আগেই শুরু হয় গুলিবর্ষণ। পাক সেনার বুলেট বিঁধে যায় তাঁর শরীরে, কোনমতে শরীর টানতে টানতে ক্যাম্পের দিকে ফিরে আসছিলেন বটে কিন্তু সে সময় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির সঙ্গে অ্যাক্সিডেন্ট হয় তাঁর। জ্ঞান হারান মুর্লিকান্ত।
বহুদিনের চিকিৎসার পর সেরে উঠলেও হাঁটা চলার সমস্যা থেকেই যায় চিরসঙ্গী হয়ে। কিন্তু ভেঙে পড়েননি এই স্পোর্টসম্যান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শুরু করেন সাঁতার। অদম্য মনোবল আর অস্বাভাবিক জেদ সাঁতারেও তাঁকে করে তোলে অপরাজেয়। সেই সূত্র ধরেই ১৯৭২ সালে জার্মানির হেডেলবার্গে গ্রীষ্মকালীন প্যারালিম্পিক্স যোগ দেওয়ার সুযোগ পান তিনি। নিজেকে প্রমাণ করার এই সুযোগ কাজে লাগাতে কোন ভুল করেননি মুর্লিকান্ত। তাঁর হাত ধরেই ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে প্রথম সোনা জয় করে ভারত। ইতিমধ্যেই একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে পদ্মশ্রী সম্মানেও ভূষিত করা হয় তাঁকে। তাঁর জীবনকাহিনী এখনও বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।