বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গতকাল টোকিওতে জ্যাভলিন থ্রোয়িং প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক জিতে এই মুহূর্তে সংবাদ শিরোনামে নীরজ চোপড়া। কিন্তু সফরটা মোটেই সহজ ছিল না এই ভারতীয় ক্রীড়াবিদের জন্য। দীর্ঘ ১২১ বছরের শাপমুক্তি ঘটিয়েছেন তিনি, তার জন্য যে অনেকটা ত্যাগ সহ্য করতে হবে তা বলাই বাহুল্য। ছোটবেলায় মূলত ভীষণ দুষ্টু ছিলেন নীরজ, আর তার সাথেই বাংলায় যাকে বলে গুবলু গাবলুও।
মোটা বাচ্ছার তকমা থেকে বাঁচতেই একটা সময় হাতে বর্শা তুলে নিয়েছিলেন নীরজ। বাবা সতীশ কুমার চোপড়া চাইতেন, ছেলের দুষ্টুমি একটু কমুক। কখনও সে মৌমাছির চাক ভাঙতে যায়, কখনও আবার গরু বাছুরের পিছনে লাগে। এই দুষ্টুমি কমাতেই কাকা তাকে নিয়ে যান ১৫ কিলোমিটার দূরে পানিপথের শিবাজী স্টেডিয়ামে। তাকে মূলত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দৌড়ের জন্যই, কিন্তু দৌড়ে মোটেই আগ্রহ ছিল না মোটাসোটা নীরজের। এরপরেই হঠাৎ সে দেখতে পায় কিছু ছেলেমেয়ে প্র্যাকটিস করছে বর্শা ছোঁড়া। এই খেলাটি মনে ধরে তার।
সেই শুরু, তবে সফর মোটেই সহজ ছিল না। ২০১১ সালে প্রবীণ জ্যাভেলিন থ্রোয়ার জয়বীর চৌধুরী প্রথম নীরজের মধ্যে প্রতিভা দেখতে পান। শুরু হয় কঠোর ট্রেনিং। এরপর নীরজ আরও ভালো অনুশীলনের জন্য পাঁচকুলার তাউ দেবী লাল স্টেডিয়ামে চলে আসেন এবং ২০১২ সালের শেষের দিকে অনূর্ধ্ব -১৬ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। মূলত কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এই ভারতীয় ক্রীড়াবিদ। যৌথ পরিবারে তিন কাকা জ্যাঠা এবং দশজন ভাই বোনের সাথে তার বড় হওয়া।
কিন্তু একটা সময় উন্নত মানের বর্শা কিনে দেবারও পয়সা ছিল না নীরজের পরিবারের কাছে। দেড় লক্ষ টাকার বর্শার বদলে কোনমতে ৭০০০ টাকার বর্শা দিয়েই অনুশীলন চালিয়ে গেছেন তিনি। একটা সময় ছিল না কোচও। কিন্তু অনুশীলন ছাড়েননি নীরজ ইউটিউব ভিডিও দেখেই নিজের ভুল শোধরাতে থাকেন তিনি, চালিয়ে যেতে থাকেন অভ্যাস। ২০১৬ সালে জুনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক লাভের পর অবশ্য পুলিশের সুবেদার পদে চাকরি পাকা হয় তার।
কিন্তু কঠোর পরিশ্রম থেকে কখনও বিমুখ হননি এই ক্রীড়াবিদ। এমনকি অলিম্পিকের প্র্যাকটিসের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং মোবাইল ফোনও ত্যাগ করেছিলেন সম্পূর্ণভাবে। মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলেই একমাত্র ভিডিও কলে কথা বলতেন নীরজ। এখনও পর্যন্ত ছটি স্বর্ণপদকসহ মোট সাতটি পদক রয়েছে তার নামে। অলিম্পিকেও প্রথম রাউন্ডেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, শুধু প্রতিনিধিত্ব নয় তিনি পদকের দাবিদার। শনিবার সেই আশা পূর্ণও করলেন তিনি।