স্নাতক হয়েও লটারি বিক্রি করছিলেন যুবতি! WBCS হওয়ার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলেন পুলিশকর্মীরা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কোনো বিপদেই হোক কিংবা কোনো সাহায্যের প্রয়োজনে সবার আগে আমরা যাঁদের কাছে ছুটে যাই তাঁরা হলেন পুলিশকর্মী। যথাসাধ্য সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়ে মানুষের পাশে থাকেন তাঁরা। আর যার ফলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন সাধারণ মানুষেরা। তবে, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ঘটনায় বারংবার কাঠগড়ায় উঠেছে পুলিশের ভূমিকা। শুধু তাই নয়, ঘুষখোর, অত্যাচারীর মত একাধিক অভিযোগের তীরেও বিদ্ধ হতে হয় তাঁদের। তবে, পুলিশ যে সত্যিই আমাদের রক্ষক হওয়ার পাশাপাশি মানবিকতার মূর্ত প্রতীক তা ফের একবার প্রমাণ করল জলপাইগুড়ির এই ঘটনা।

কলেজছাত্রীর স্বপ্নপূরণে রীতিমত ত্রাতার ভূমিকা পালন করল পুলিশ। জানা গিয়েছে যে, জলপাইগুড়ি শহরের আদরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নবম্বিকা দাশগুপ্ত ইংরেজি অনার্স পাশ করেছেন। তবে, তাঁর ইচ্ছে হল ডব্লিউবিসিএস অফিসার হওয়া। যদিও, তাঁর সেই স্বপ্নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে পরিবারের আর্থিক অনটন। এমনকি, সংসার চালাতে গ্র্যাজুয়েশন পাশ করেও বাবার সঙ্গে লটারি বিক্রি করতে হত তাঁকে।

এদিকে, এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে ডান হাত খুইয়েছেন নবম্বিকার বাবা নাড়ুগোপাল দাশগুপ্ত। তারপর থেকেই তিনি জলপাইগুড়ির স্টেশন বাজারে ছোট্ট একটি লটারির দোকান চালান। আর এটাই একমাত্র আয়ের উৎস তাঁদের পরিবারে।

স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত কষ্টের মাধ্যমেই চলছিল নবম্বিকার পড়াশোনা। তবে, সেই সীমিত উপার্জনেও কোপ বসায় করোনা। মহামারীর আবহে লকডাউনের ফলে দোকান বন্ধ থাকায় চরম বিপদে পড়েন তাঁরা। এমতাবস্থায়, ডব্লিউবিসিএসের কোচিংয়ে ভর্তি হয়েও পড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি নবম্বিকার পক্ষে।

এদিকে, একটা সময়ে কার্যত হারিয়ে যেতে থাকে ডব্লিউবিসিএসের স্বপ্ন। বাবার লটারির ব্যবসায় হাত লাগিয়ে সকাল-বিকেল দোকানে বসতে শুরু করেন নবম্বিকা। এমতাবস্থায়, একটি সংবাদমাধ্যমে তাঁর এই লটারি বেচার খবর প্রকাশিত হতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাঁর ডব্লিউবিসিএস হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে অভিনব ভাবে এগিয়ে আসেন জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ কর্মীরা।

আর এই ঘটনাতেই আপ্লুত হয়েছেন সকলে। জানা গিয়েছে যে, কোতোয়ালি থানার পুলিশ কর্মীরা নিজেরাই খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোচিং নিতে হলে, একটি ভাল কোচিং সংস্থায় ভর্তি হতে প্রায় ৭৭ হাজার টাকা প্রয়োজন। আর সেই টাকাই চাঁদার মাধ্যমে নবম্বিকার হাতে তুলে দেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, নবম্বিকার পড়ার যাবতীয় খরচও বহন করার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

মূলত, গত মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানায় নবম্বিকা ও তাঁর বাবাকে ডেকে এভাবেই “সারপ্রাইজ” দিলেন পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত। এই প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পড়ে সমগ্র বিষয়টি জানতে পারি। এরপর আমরা মেয়েটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য কোতোয়ালি থানার পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিই। আমরা ওর ডব্লিউবিসিএস পড়ার যাবতীয় খরচ বহন করব। আমরা সকলেই চাই, ওর জীবনের স্বপ্ন সফল হোক।”

WhatsApp Image 2022 04 20 at 7.57.55 PM

এদিকে, ওই ঘটনা সামনে আসতেই সকলেই পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নবম্বিকার পাশে যেভাবে তাঁরা দাঁড়ালেন সেজন্য তাঁদের কুর্ণিশ জানিয়েছেন সবাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ, বালিগঞ্জ আইটিআই-এর কাছে ডিউটি করার সময় প্রতিদিনই একটি বাচ্চা ছেলেকে খেলাধুলা করতে দেখতেন। তারপরই তিনি তাঁকে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ডিউটির ফাঁকেই চলত পড়াশোনার পালা। এই প্রসঙ্গটি ভাইরালও হয়ে নেটমাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই, পুলিশকর্মীদের এই অভিনব উদ্যোগগুলি মন জিতে নিচ্ছে সকলের।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর