বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে বিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে রয়েছে আমেরিকা ও তার মিত্রপক্ষ এবং অন্যদিকে রয়েছে রাশিয়া ও তাকে সমর্থনকারী কিছু দেশ। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে সকলেই। যদিও ভারত এখনও পর্যন্ত জোটনিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করে নিজেকে নিরপেক্ষ রেখেছে। এর নমুনা ইউএনএসসিতে ভোটদানে বিরত থেকে ভারত ইতিমধ্যেই দিয়েছে।
এদিকে, আমেরিকা ও রাশিয়া দুই দেশই ভারতকে নিজেদের পাশে আনার জন্য সবরকমের চেষ্টা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায়, ভারতের অবস্থান ঠিক কী এবং কীভাবে রাশিয়ার সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রয়েছে, তার তাৎপর্য তুলে ধরা যেতে পারে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বৈঠক থেকে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক এই বৈঠক বিশ্বকে ঠিক কী বার্তা দিয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী সময় দিয়েছেন রুশ বিদেশমন্ত্রীকেই:
বিগত কিছু দিন ধরে একাধিক দেশের বিদেশমন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভারতে এসেছেন। সম্প্রতি চিন ও মেক্সিকোর বিদেশমন্ত্রীরাও ভারত সফর করেছেন। ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রীও ঘুরে গিয়েছেন ভারত থেকে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার যখন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ভারতে পৌঁছন, তার আগে আমেরিকা, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের নিরাপত্তা উপদেষ্টারাও দিল্লি পৌঁছেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কারোর সাথে দেখা করার সময় দেননি। তবে, তিনি শুধুমাত্র রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী লাভরভের সাথে দেখা করেন এবং প্রায় ৪০ মিনিট ধরে দু’জনের মধ্যে কথা হয়।
রাশিয়া কেন আস্থা দেখাচ্ছে?
রাশিয়া ও ভারত পুরনো বন্ধু। সামরিক ক্ষেত্রে এই দুই দেশের সম্পর্কও অনেক পুরনো। এমতাবস্থায়, ইউক্রেনে চলা যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া তার পুরনো বন্ধুত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করছে। রুশ রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে সেদেশের বিদেশমন্ত্রী সকলেই বলেছেন যে, এই সময়ে ভারতের গৃহীত অবস্থান অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং এটি এখনও পর্যন্ত কোনো চাপের মুখে পড়েনি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করার আগে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ভারতকে মধ্যস্থতা করার কথাও বলেছেন।
আমেরিকাও জানে সম্পর্ক কতটা গভীর:
ইউক্রেন সঙ্কটের মধ্যে রাশিয়া থেকে ভারতের রপ্তানিকৃত তেলের মূল্যে ছাড়ের সুবিধা হোক কিংবা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে রুশ বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক, আমেরিকাও জানে এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক কতটা গভীর। যদিও আমেরিকা সবরকম চেষ্টা করছে যাতে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত যেন আমেরিকার দরবারে দাঁড়ায়। কিন্তু ভারত এখনও পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমতাবস্থায়, আমেরিকার জারি করা কিছু বিবৃতি দেখে নেওয়া যাক।
রাশিয়া যখন ভারতকে ছাড়ের সুবিধা দিয়ে অপরিশোধিত তেল দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, তখন প্রথমে তা আমেরিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এমনকি, আমেরিকা পূর্ণ চাপ দিয়েছিল যে ভারত যেন এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে। কিন্তু ভারত যখন এই প্রস্তাব মেনে নেয়, তখন আমেরিকা ভারতকে একটি সার্বভৌম দেশ বলে নিজদেরকে পিছিয়ে নেয়।
প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার ওপর ভারতের নির্ভরতার প্রসঙ্গে আমেরিকা দাবি জানিয়েছিল যে, তারা জানে ভারত কেন রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে! এমনকি, তারা মনে করে যে, ভারত বহুদিন ধরেই সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তবে নিজেদের দলে টানতে আমেরিকা ভারতকে অস্ত্র সরবরাহেরও প্রস্তাব দেয়।
এছাড়াও, রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী ভারতে আসায় আমেরিকা বুঝতে পেরেছিল যে, তারা রাশিয়ার সাথে তাদের পুরনো সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। এরপর শেষে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রের তরফে বলা হয়, আমরা চাই না ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্ক ছিন্ন করুক।