বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভালো ফল করে বড় প্রশাসনিক আধিকারিক হতে কে না চায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামের দিকে বহু ছেলে-মেয়ের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায় ঠিকঠাক পরিষেবা এবং পরিকাঠামো না থাকার জন্য। ভালো স্কুল, ভালো কোচিং না হলে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করে অনেকে। কিন্তু তাদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা তামিলনাড়ুর কে এলামবাহাভত।
এলামবাহাভত এমন একজন সিভিল সার্ভিস আধিকারিক যিনি জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন চূড়ান্ত দারিদ্র্যের মধ্যে। তার বাবা ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন সামান্য আধিকারিক। মা কাজ করতেন কৃষিক্ষেত্রে। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে জমিতে কাজ করা আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালাতে হয়েছে এলামবাহাভতকে। তবে তাতে তেমন কোন সমস্যা ছিল না।
কিন্তু হঠাৎ করেই বাবা মারা যাওয়ায় দ্বাদশ শ্রেণী পাস করার পর পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় এলামবাহাভতকে। কিন্তু স্বপ্ন ছাড়েননি তিনি। তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলার এই যুবক ডিসটেন্সে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রী গ্রহণ করেন। তখন অবশ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার কোন ইচ্ছেই ছিলো না তার। এলামবাহাভত নিজেই বলেন, আমার বন্ধুরা কেউ ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য পড়াশোনা করছিল এবং তৈরি হচ্ছিল। সে সময় আমার সিভিল সার্ভিসের কোনো স্বপ্ন ছিল না।
এরইমধ্যে এল ডি সি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন তিনি। ইচ্ছে ছিল সরকারি চাকরি করে মা এবং বোনেদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু চাকরি পেতে গেলে দরকার ছিল ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের কাছে বেশ কিছু ডকুমেন্টস জমা দেওয়া। আর এখানেই বড় প্রতারণা করা হয় এলামবাহাভতের সঙ্গে। প্রায় সমস্ত ধরনের সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার পরেও তার চাকরি আটকে যায়। চোখের সামনে তিনি দেখেন ওয়েটিং লিস্ট থেকে অন্যদের চাকরিতে নেওয়া হচ্ছে। ৯ বছর ধরে লড়াই করার পরও এই চাকরি পাননি এলামবাহাভত। আর তারপর থেকেই সিভিল সার্ভিস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি।
এলামবাহাভত বলেন, “লোকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেয় অনুপ্রাণিত হয়ে। আমি দিয়েছি, ভারতীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর বিতৃষ্ণ হয়ে।” অবশেষে ২০১৫ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ১১৭ র্যাঙ্ক করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া এলামবাহাভত প্রমাণ করে দেন অসম্ভব শব্দ থাকে অভিধানে৷ যাদের আত্মবিশ্বাস আছে, যারা লড়াই করতে সক্ষম তারা কখনোই হেরে যান না।