পুলিশ যখন শিক্ষক! ডিউটির ফাঁকেই তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রকে সস্নেহে পড়াচ্ছেন কর্তব্যরত সার্জেন্ট

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কোনো প্রয়োজন হোক কিংবা কোনো বিপদে, সবার আগে সাহায্যের জন্য আমরা ছুটে যাই পুলিশদের কাছেই। আমাদের সমাজে রক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তাঁরা। পাশাপাশি, তাঁদের হাতেই অর্পিত থাকে আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বও। কিন্তু, সাম্প্রতিক কালে কিছু কিছু ঘটনায় কাঠগড়ায় ওঠে পুলিশের ভূমিকা। যদিও, সম্প্রতি এক পুলিশকর্মীর অভিনব উদ্যোগ মন জিতে নিল সবার।

পাশাপাশি, সেই সংক্রান্ত একটি ছবি ভাইরালও হয়েছে নেটমাধ্যমে। যা দেখে ওই পুলিশকর্মীকে একবাক্যে কুর্ণিশ জানিয়েছেন সকলেই। জানা গিয়েছে যে, সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ, বালিগঞ্জ আইটিআই-এর কাছে ডিউটি করার সময় প্রতিদিনই একটি বাচ্চা ছেলেকে খেলাধুলা করতে দেখেন।

এদিকে, ওই ছেলেটির মা রাস্তার ধারের একটি খাবারের দোকানে কাজ করেন। কোনোমতে ফুটপাতেই দিন কাটে ওই মা-ছেলের। এমতাবস্থায়, সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, বছর আটেকের ওই বাচ্চা ছেলেটি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মূলত, ছেলের ভালো ভবিষ্যতের আশায় অত্যন্ত কষ্টের মাধ্যমেই সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন মা।

কিন্তু, ছেলের পড়াশোনার প্রতি অনীহা হয়ে উঠছিল চিন্তার কারণ। এদিকে, কর্মস্থান কাছাকাছি হওয়ায় ওই ট্রাফিক সার্জেন্টকে চিনতেন বাচ্চাটির মা। একদিন তাঁর কাছেই ছেলের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সমস্ত কিছু শুনে ওই ছেলেটির পড়াশোনার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন প্রকাশ।

শুধু তাই নয়, যেদিন যেদিন ওখানে ডিউটি থাকে, সেই সব দিন নিয়ম করে পড়াতে বসান বাচ্চাটিকে। কোনোদিন ট্রাফিক সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে, আবার কোনোদিন ডিউটি শেষ করেই চলে পড়াশোনার পর্ব। এমনকি, বাড়ির কাজ অর্থাৎ হোমওয়ার্ক দেওয়া, বানানের ভুল শুধরানো, উচ্চারণ এবং হাতের লেখা পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া, সবটাই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে করেন ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট।

এমতাবস্থায়, গায়ে উর্দি এবং পায়ে গেটার্স থাকায় বসতে অসুবিধে হয় বলে তিনি একটি গাছের সরু ডালকে “টুল” বানিয়ে তার সাহায্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পড়ান ছেলেটিকে। আর এভাবেই ট্রাফিকের পাশাপাশি ওই পড়ুয়ারও পড়াশোনা সামলাচ্ছেন তিনি। প্রথমে ছাত্র-শিক্ষকের এই ছবি সাংবাদিক অর্ণবাংশু নিয়োগী টুইট করেন নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে। যদিও, তারপর সেটি কলকাতা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। ইতিমধ্যেই ৯ হাজারের কাছাকাছি লাইক পড়েছে ছবিটিতে। পাশাপাশি, নেটিজেনরা ওই ট্রাফিক পুলিশের এহেন উদ্যোগে তাঁকে স্যালুটও জানিয়েছেন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর