ভয়ঙ্কর হচ্ছে পরিস্থিতি! তাইওয়ানের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করল চিন! মার্কিন ব্রহ্মাস্ত্র মোতায়েন তাইপেইর

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিমধ্যেই আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের অধ্যক্ষ ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান (Taiwan) সফর নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছে চিন (China)। এমনকি, এই কারণেই ২৬ বছর পর আবারও তাইওয়ানের সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করল জিনপিংয়ের দেশ। পাশাপাশি, চিনা গণমাধ্যমে এইসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ভিডিও প্রকাশ করে তাদের শক্তি ঘোষণা করেছে। এই প্রসঙ্গে গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে যে, চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি বৃহস্পতিবার তাইওয়ান দ্বীপের চারপাশে বড় আকারের সামরিক মহড়া শুরু করেছে।

তাইওয়ান প্রণালীর পূর্ব অংশে পূর্ব-নির্ধারিত এলাকায় দূরপাল্লার রকেট আর্টিলারি এবং প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে লাইভ ফায়ার ড্রিলের মাধ্যমে শুরু হয় এই মহড়া। অপরদিকে, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে, “বৃহস্পতিবার চিনা সেনাবাহিনী আমাদের দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তাইওয়ানের সেনাবাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়েছে।”

তাইওয়ান থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে চিনা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে: এই প্রসঙ্গে PLA ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে যে, সেনাবাহিনী দুপুর ১ টা নাগাদ তাইওয়ান প্রণালীতে দূরপাল্লার আর্টিলারি থেকে লাইভ ফায়ার ড্রিল পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি, সেটি নির্ভুলতার সাথে বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে আঘাত করেছে বলেও জানা যায়। এই ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপ চিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। একাধিক পোস্ট দাবি করেছে যে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পূর্ব চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের পিংটন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

যেটি তাইওয়ান থেকে মাত্র ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাশাপাশি, চিনা গণমাধ্যমগুলি জানিয়েছে চিনের মূল ভূখণ্ড থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র তাইওয়ান দ্বীপের আকাশে উড়ে গেছে। ওই সময়, চিনা সামরিক বাহিনী DF-21, DF-26 এবং হাইপারসনিক DF-17 সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট আর্টিলারি সিস্টেম নিক্ষেপ করে বলেও জানা যায়।

চিনের ডিএফ-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র কতটা বিপজ্জনক: জানিয়ে রাখি যে, চিনের কাছে থাকা DF-17 বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক ক্ষেপণাস্ত্র। হাইপারসনিক গতিতে ওড়ানোর কারণে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যেকোনো অ্যান্টি ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা ট্র্যাক করা খুবই কঠিন। ক্ষেপণাস্ত্রটিতে DF-ZF হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যালের মাউন্ট করা হয়েছে। যা উৎক্ষেপণের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রধান রকেট থেকে আলাদা হয়ে হাইপারসনিক গতি অর্জন করে। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর চিনের রাষ্ট্রীয় দিবসের সামরিক প্যারেডে DF-ZF-এর সাথে DF-17 আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়েছিল। মোট ১৫,০০০ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১১ মিটার লম্বা। পাশাপাশি, এটির অপারেশনাল রেঞ্জ ১,৮০০ থেকে ২,৫০০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে।

DF-26 মিসাইল ৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে: এদিকে, চিনের DF-26 মিসাইলের রেঞ্জ হল প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার। DF-26 মিসাইলটি পারমাণবিক এবং প্রচলিত উভয় ধরনের অস্ত্রই বহন করতে পারে। ২০১৬ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মির রকেট ফোর্সে ক্ষেপণাস্ত্রটি মোতায়েন করা হয়েছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করেছে অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্পোরেশন অফ চায়না।

এমতাবস্থায়, চিন দাবি করেছে যে, DF-26 ক্ষেপণাস্ত্রটি স্থল ও জলের লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট পারমাণবিক বা প্রচলিত হামলা চালাতে পারে। পাশাপাশি, এটি চিনের প্রথম প্রথাগতভাবে সশস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যা গুয়াম এবং সেখানে অবস্থিত মার্কিন সামরিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত একটি প্যারেডের সময় চিন প্রথমবারের মত এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রদর্শন করেছিল।

তাইওয়ানের প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের শক্তি জানুন: চিনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জবাবে তাইওয়ান আমেরিকার কাছ থেকে কেনা প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করেছে। মূলত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করে। এটি একটি কমব্যাট প্রুভেন অস্ত্র যেটির শক্তি একাধিক যুদ্ধে পরীক্ষা করা হয়েছে। প্যাট্রিয়ট (MIM-104) হল একটি দীর্ঘ-পাল্লার, সব রকমের আবহাওয়ায় কাজ করতে পারা সর্বোচ্চ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা সামরিক ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং উন্নত বিমানের মোকাবিলা করতে পারে।

 

এটি ম্যাসাচুসেটসের রেথিয়ন ও ফ্লোরিডার লকহিড মার্টিন মিসাইল এবং ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম দ্বারা নির্মিত হয়েছে। প্যাট্রিয়ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, গ্রিস, ইজরায়েল, জাপান, কুয়েত, নেদারল্যান্ডস, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড, সুইডেন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, রোমানিয়া, স্পেন এবং তাইওয়ান সহ আরও কয়েকটি দেশে অবস্থান করছে।প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ হল ৭০ কিলোমিটার এবং এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৪ কিলোমিটারেরও বেশি। পাশাপাশি, এটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ উড়ান সময় হল যথাক্রমে নয় সেকেন্ডেরও কম এবং সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মিনিট।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর