বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার পৌনে নটা নাগাদ সুদূর সূর্যোদয়ের দেশে হকিকে যেন এক নতুন ভোরের স্বপ্ন বুনতে শেখালেন রুপিন্দর পাল সিং, মনপ্রীত সিংহরা। এক সময় যে হকি ছিল গোটা ভারতের গর্ব, ১৯৮০ সালের পর থেকে কার্যত অতীত হতে শুরু করে সেই গৌরবময় মুহূর্তগুলি। ৪১ বছর পর পদক জয়ের খরা কাটিয়ে হকিকে যেন পুনরুজ্জীবিত করলেন মনপ্রীতরা। জার্মানির বিরুদ্ধে জিতে নিলেন ব্রোঞ্জ। অবশ্য শুধু শ্রীজেশ, সিমরনজিতরা নয়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে স্বপ্ন বুনতে শিখিয়েছেন ভারতীয় মেয়েরাও। রানী রামপালরাও এখন দেখছেন ব্রোঞ্জের স্বপ্ন।
কিন্তু জানেন কি এর পিছনে রয়ে গেছেন এক নেপথ্য নায়ক? বয়সে তিনি প্রবীণ হলেও নামে একেবারে নবীন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক না থাকলে জাপানে এই নতুন করে ইতিহাস গড়া কতটা সম্ভব হতো ভারতীয় হকি দলের পক্ষে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে যায়। কারণ বিশ্বকাপে গোটা হকি দলটিকেই স্পনসর করেছে ওড়িশা সরকার। নিজেও হকি খেলোয়াড় ছিলেন নবীন, ছিলেন একজন দুর্দান্ত গোলকিপার। আর তাই হকির মর্ম তিনি বোঝেন ভালোই। নবীন বলেন, “ওড়িশাতে হকি শুধু একটা খেলা নয়, এটা জীবন। এখানে ছেলেরা হাঁটা শেখে হকিস্টিক হাতে। ওড়িশা থেকেই উঠে এসেছে একাধিক প্রতিভাবান খেলোয়াড়।”
২০১৮ সালে যখন মহিলা এবং পুরুষ দলের স্পনসরশিপ ছেড়ে দেয় সাহারা, নিজের কাঁধে সেই দায়িত্ব তুলে নেন নবীন। ভাবতেও কি পারা যায় আমাদের এই দেশেই ক্রিকেটের একটি আইপিএল দল কিনতে রীতিমতো লাইন পড়ে যায়, অথচ সেই হকি যার ঝুলিতে রয়েছে এক ডজন আন্তর্জাতিক পদক, স্পনসরের অভাবে ভবিষ্যৎ সংকটে পড়ে গিয়েছিল তাদেরই। ২০১৪ সাল থেকে তাদের পাশে আছে ওড়িশা সরকার। আর তাই এই জয় শুধুমাত্র ভারতীয় মহিলা এবং পুরুষ দলের নয় ওড়িশার সাধারণ মানুষেরও।
অস্ট্রেলিয়া জয়ের পর নিজের টুইটার থেকে ভারতীয় মহিলা হকি শুভেচ্ছা জানিয়ে একথাই লিখেছিলেন নবীন, “ভারতীয় মহিলা হকি দল যে অলিম্পিক্সের ইতিহাসে প্রথম বার সেমি ফাইনালে পৌঁছেছে, তা গোটা দেশের জন্য দারুণ গর্বের বিষয়৷ ওড়িশা যে ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় পুরুষ এবং মহিলা হকি দলের পাশে আছে, এটা ভেবেও আমাদের রাজ্যের মানুষ গর্বিত৷” আজও যখন ভারত বিশ্বের মঞ্চে পদক লাভ করল উত্তেজনায় আর বসে থাকতে পারেননি এই মানুষটি। সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠে শিশুদের মতই হাততালি বাজাতে থাকেন তিনি। ওড়িশার বেশকিছু মেয়েও রয়েছে ভারতীয় হকি দলে। আর তাদের উপরেই এখন বাজি ধরেছেন নবীন।
শুধু স্পনসরশিপ নয় এখনও পর্যন্ত এই বাবদ ১৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে তার সরকার। তৈরি হয়েছে একটি অত্যাধুনিক হকি স্টেডিয়াম। ২০১৮ সালে ওড়িশাতেই আয়োজিত হয়েছে হকি বিশ্বকাপও। সবকিছুর পেছনেই রয়েছেন ৭৪ বছরের এই প্রবীণ মানুষটি। একসময় দুনে স্কুলে নিজে যিনি ছিলেন গোলকিপার, আজও দুই হাত দিয়ে হকিকে আগলে রেখেছেন তিনিই। তিনি সবসময়ই নেপথ্যে, সামনে এসে ক্রেডিট নিতে দেখা যায় না তাকে। কিন্তু নেপথ্যে এমন একজন মানুষ না থাকলে আজ ভারত হয়তো পৌঁছাতে পারত না বিশ্বের মঞ্চে। শোনা গিয়েছে, ভারতের বাস্কেটবল দলের দায়িত্ব নিয়েছেন ওড়িশার এই ক্রীড়াপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রী। এখন তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে টুইট করছেন অনেকেই। সে তালিকায় যেমন রয়েছেন কর্নাটকের বিজেপি সংসদ প্রতাপ সিম্বা, তেমনই আবার রয়েছেন অভিনেতা রাহুল বসুও। শেষ পর্যন্ত বলতে হয় একটাই কথা, ভাগ্যিস নবীন এই বয়সেও নবীন ছিলেন, তাইতো তিনি বাজি ধরেছিলেন তারুণ্যের ওপর।