বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের কাছে বেড়ানোর জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা হল দার্জিলিং (Darjeeling)। রাজ্যের এই শৈলশহরকে ঘিরে পর্যটকদের কাছে প্রবল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। এমতাবস্থায়, দার্জিলিং যাওয়ার ক্ষেত্রে আবার অন্যতম জনপ্রিয় এবং পুরোনো ট্রেন হল দার্জিলিং মেল (Darjeeling Mail)। শুধু তাই নয়, এই ট্রেনই একাধিক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। বর্তমান প্রতিবেদনে সেই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করা হল।
জেনে অবাক হবেন যে, এই ট্রেনে একাধিক মনীষী সফর করেছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মত বরেণ্য ব্যক্তিরা। একটা সময়ে দার্জিলিং মেল শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সফর শুরু করে অবিভক্ত বাংলার ওপর দিয়ে ঈশ্বরদী, হিলি, পার্বতীপুরের ওপর দিয়ে ছুটে চলে হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি হয়ে পৌঁছে যেত শিলিগুড়িতে। সেখানেই দার্জিলিংগামী টয়ট্রেনের সাথে সংযোগসাধন করিয়ে দিত এই ট্রেন।
এই ট্রেন টেনে নিয়ে যেত ষাঁড় এবং হাতি: বর্তমান সময়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ট্রেনকে গতিশীল করে তুলতে একের পর এক প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু, ১৮৬৯ সাল নাগাদ দার্জিলিং মেলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজ করত ষাঁড়। হ্যাঁ, প্রথমে শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই ট্রেনের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে এহেন ঘটনাও। যদিও, ওই ট্রেনে মানুষ চড়ত না। মূলত, দার্জিলিং থেকে সাহেবগঞ্জ পর্যন্ত চা বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজেই ব্যবহৃত হত ওই ট্রেন।
শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে ওই ট্রেন টানার কাজে নিয়োগ করা হয় একটি হাতিকে। যেটি ১,৩০০ টাকায় কেনা হয় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তরফে। মূলত, দার্জিলিঙের চা এস্টেটগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত নির্দেশ এই ট্রেন মারফত উত্তরবঙ্গে আসত। এদিকে, শিলিগুড়ি অবধি গিয়ে দার্জিলিংগামী টয়ট্রেনের সঙ্গে এটি সংযোগ স্থাপন করায় ট্রেনটির নাম দার্জিলিং মেল দেওয়া হয়।
পাশাপাশি, গবেষকদের মতে যাত্রীদের সঙ্গে চিঠি পাঠানোর কাজ হবে বলেই এই ট্রেনের নামে “মেল” শব্দটি জোড়া হয়। আর সেই ঐতিহ্য এখনও বহন করে চলেছে দার্জিলিং মেল। জানা যায়, ১৯১৫ সাল নাগাদ এই ট্রেনটিই ভারতের অন্যতম দ্রুতগামী ট্রেন হিসেবে বিবেচিত হত। এমতাবস্থায়, বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বমহিমায় নিজের গন্তব্যে ছুটে চলেছে দার্জিলিং মেল। পাশাপাশি, ট্রেনটি জিইয়ে রেখেছে তার অনবদ্য ইতিহাসকেও।