দেশহীন হয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন বিমানবন্দরে, দেড়যুগ কাটিয়ে এয়ারপোর্টেই প্রয়াত ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বিমানবন্দরই ছিল বাড়ি, সেখানেই গড়ে উঠেছিল মেহরান করিমির জীবন। আর সেই বিমানবন্দরের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’। জানা গিয়েছে, ইরানের এই শরণার্থী মেহরান করিমি নাসেরি প্যারিসের শার্ল দে গল বিমানবন্দরেই মারা গেলেন। বলা বাহুল্য মেহরান করিমি ১৮ বছর ধরে এই বিমানবন্দরে বসবাস করছিলেন।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার বিকেলে বিমানবন্দরের নিকটবর্তী টার্মিনাল 2F এর কাছাকাছি এলাকায় যাওয়ার সময় মেহরান করিমি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা বহু চেষ্টা করেও শেষপর্যন্ত মেহরান করিমিকে আর জীবনযুদ্ধে ফিরিয়ে আনতে পারেননি। ইরানি বংশোদ্ভূত মেহরান করিমি নাসেরি প্যারিসের শার্ল দে গল বিমানবন্দরে ১৮ বছর (২৬শে আগস্ট ১৯৮৮ থেকে জুলাই ২০০৬) পর্যন্ত বসবাস করেছিলেন। তাঁর রোজনামচার গল্প হলিউডের পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গকে এতটাই বিস্মিত করে তুলেছিল যে মেহরান করিমির জীবনকাহিনী অবলম্বনেই তিনি বানিয়ে ফেলেছিলেন ‘দ্য টার্মিনাল’-এর মতো একটি দুর্দান্ত চলচ্চিত্র।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাসেরির জন্ম ১৯৪৫ সালে ইরানের একটি অংশ, সুলেমানে। ইরান তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। নাসেরির মা ছিলেন একজন ব্রিটিশ মহিলা এবং বাবা ছিলেন একজন ইরানি। ১৯৭৪ সালে মেহরান করিমি নাসেরি ইরান থেকে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করতে আসেন। পড়াশুনা শেষে যখন তিনি দেশে ফিরে আসেন, তখন ইরানের শাহ শাসনের বিরোধিতা করার জন্য তাকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং পাসপোর্ট ছাড়াই বহিষ্কার করা হয়। তাঁর দেশ থেকে বহিষ্কারের পর মেহরান করিমি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে যান। যদিও ভিন্ন মত অনুসারে আরেকটি তথ্য উঠে আসে। এটাও বলা হয় যে তাকে ইরান থেকে বহিষ্কার করা হয়নি বরং তিনি নিজেই ইরান ছেড়েছেন।

জানা যায়, মেহরান করিমির কাছে থাকা তাঁর শংসাপত্র সহ ব্রিফকেস প্যারিস রেলস্টেশন থেকেই চুরি হয়ে যায়। কাগজপত্রের অভাবে ফ্রান্সের পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল কিন্তু পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও বিমানবন্দরে তাঁর প্রবেশ বৈধ ছিল কিন্তু নাসেরির ফেরার কোনো দেশ ছিল না, বাড়ি ছিল না। তাই প্যারিসের ওই বিমানবন্দরের ‘টার্মিনাল ওয়ান’ হয়ে ওঠে তাঁর বাড়ি।

Naseri 1

বিমানবন্দরে থাকাকালীন নাসেরি তাঁর আত্মজীবনীও লিখছিলেন। ২০০৪ সালে ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ নামে তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়। বইটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠতেই স্টিভেন স্পিলবার্গ একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৩ সালে, স্পিলবার্গের প্রযোজনা সংস্থা ড্রিমওয়ার্কস ২৫০,০০০ ডলার (প্রায় ২ কোটি টাকা) দিয়ে নাসেরির কাছ থেকে ছবিটি নির্মাণের স্বত্ব কিনে নেয়। ২০০৪ সালে, ‘দ্য টার্মিনাল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল, যা একটি বিশাল সাফল্য অর্জন করে।


Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর