বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্ষণের (Rape) মত ঘৃণ্য ঘটনার খবর প্রায়শই সামনে আসে। এমনকি, যত দিন এগোচ্ছে ততই এহেন ঘটনার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে, এহেন ঘটনার পর তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের শিকার হওয়া মহিলাদের “টু ফিঙ্গার টেস্ট” (Two Finger Test)-এর মধ্য দিয়ে যেতে হত। যেখানে নির্যাতিতাদের যোনিতে আঙুল ঢুকিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়।
তবে, এবার এই পরীক্ষাকেই সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করল সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রসঙ্গে সোমবার আদালতের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এই টেস্ট সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। পাশাপাশি, এটি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় বহন করে বলেও জানানো হয়। এমনকি, ভবিষ্যতে ধর্ষণের ঘটনায় ফের এই পরীক্ষা করা হলে সেক্ষেত্রে মামলা দায়ের করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট “টু ফিঙ্গার টেস্ট”-কে “অসাংবিধানিক” বলে ঘোষণা করে। যদিও, ওই ঘোষণার পরেও ধর্ষণের মামলায় এতদিন যাবৎ এই পরীক্ষা চালানো হয়। এদিকে, ২০২১ সালে এক মহিলা বায়ুসেনা অফিসারের ধর্ষণের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ফের প্রশ্নের মুখে পড়ে এই পরীক্ষা। শুধু তাই নয়, ২৯ বছরের ওই মহিলা অফিসার দাবি করেছিলেন যে, ওই পরীক্ষা তাঁর কাছে যৌন নির্যাতনের সেই ভয়ংকর স্মৃতিকেই ফের যেন ফিরিয়ে দিয়েছিল।
এছাড়াও, “টু ফিঙ্গার টেস্ট-কে ঘিরে এর আগেও একাধিকবার বহু বিতর্ক হয়েছে। পাশাপাশি, এই পরীক্ষায় নির্যাতিতার গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয় বলেও অভিযোগ তোলা হয়। এমতাবস্থায়, সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ধর্ষণ ও খুনের একটি মামলার শুনানি চলাকালীন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, “এই আদালত ইতিমধ্যেই বহুবার ধর্ষণ ও যৌন নিগ্রহের মামলায় টু ফিঙ্গার টেস্টের বিরুদ্ধে অভিমত দিয়েছে। এই পরীক্ষাটির আদৌ কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। পাশাপাশি, নির্যাতিতাদের পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে এটা একটা ‘ইনভেসিভ মেথড’।”
পাশাপাশি, তিনি আরও জানান, “এই পরীক্ষায় জোর করে শরীরের ভিতরে আঙুল প্রবেশ করানো হয়। যার ফলে নির্যাতিতা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই ধর্ষণের মামলায় কোনোভাবেই এই টেস্ট আর যেন করা না হয়।” এছাড়াও, বিচারপতি, এই চিন্তাভাবনাকে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও লিঙ্গবৈষম্যেরই পরিচয় হিসেবে অভিহিত করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আগামী মাসের ৯ তারিখ দেশের ৫০ তম প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তার আগে তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হিসেবেও অত্যন্ত সক্রিয়তার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এমতাবস্থায়, “টু ফিঙ্গার টেস্ট”-এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ঐতিহাসিক রায় দিয়ে তিনি বলেন, “নির্যাতিতার যৌন জীবনের ইতিহাস মামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আজও এমন পরীক্ষা করা হয় এটাই দুঃখজনক।” পাশাপাশি, আদালতের এহেন রায়ের পরও যাঁরা এই ধরণের পরীক্ষা করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে বলেও জানা গিয়েছে।