বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ৩৪ বছর পর ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় (Indian education system) আসতে চলেছে এক বড়সড় পরিবর্তন। থাকছে না মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক। থাকছে না আর্টস, কমার্স এবং সায়েন্সের ভেদাভেদ। এই নতুন ভারতের পড়াশুনাতেই আসতে চলেছে এক নতুন যুগ।
কেন এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত? কোন দেশের বড়সড় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রথমেই শিক্ষার পরিবর্তনের প্রয়োজন।
কিভাবে করা হল এই প্রক্রিয়া?
মোদী সরকার এক সার্ভের মাধ্যমে ২ লক্ষেরও বেশি মানুষের থেকে মতামত নিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
এবার থেকে থাকছে না কোন নিয়ম নিষেধের বেড়াজাল। ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের পছন্দ মত বিষয় বেছে নিতে পারবে শিক্ষার ক্ষেত্রে। এই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় থাকছে না মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি। অর্থাৎ 10+2 এর এর পরিবর্তে থাকছে 5+3+3+4 এই হিসাবে পড়াশুনার ধরণ।
আসুন এবার জানাই কিভাবে ভাগ করা হচ্ছে এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে।
প্রথম ৫ বছর অর্থাৎ এই 5+3+3+4- এর প্রথম 5 হচ্ছে মোট ৫ বছরের পড়াশুনা। এই ফাউন্ডেশলান পর্যায়ের প্রথম ৩ বছর থাকবে অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থাৎ যার মধ্যে থাকছে নার্সারি, কেজি 1 এবং কেজি 2। এর পর বাকী ২ বছরে থাকছে ক্লাস 1 এবং ক্লাস 2-এর ধাপে। মোট মিলিয়ে হচ্ছে ৫ বছর। এই সময় ছোট বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া প্র্যাকটিস করানো হবে। এবং সেই সঙ্গে স্কুলে থাকছে খেলা ধুলার পরিবেশ। অর্থাৎ এই ৫ বছর বাচ্চাকে তার মতো করে আনন্দে খেলাধূলা করে কাটাতে দিতে হবে। শিক্ষাকে বোঝা হিসাবে নয়, ভালোবেসে আপন করে নেওয়াটাই হল মূল উদ্যেশ্য।
এরপর আসি 5+3+3+4- এর দ্বিতীয় ধাপ 3 তে। এই ধাপকে বলা হচ্ছে প্রস্তুতিমূলক পর্ব। এই পর্ব থাকছে ক্লাস 3 থেকে ক্লাস 5 অবধি। এই শ্রেনীগুলিতে বাচ্চাদের কলা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক বিষয় এবং গণিত ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হবে। এই সময় বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কারিগর হিসাবে তৈরি করা হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই সময়কালে বাচ্চারা নিজেদের মাতৃ ভাষা অথবা রাষ্ট্রীয় ভাষা অথবা আঞ্চলিক ভাষাতে পড়াশুনা করতে পারবে। ইংরেজী এবার থেকে আর বাধ্যতামূলক থাকছে না। এই বিভাগ সম্পন্ন করলে একটি সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
এরপর থাকছে 5+3+3+4- এর তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ 3। এই ধাপকে মধ্যশিক্ষা পর্যায় বলা হচ্ছে। এই পর্বে ক্লাস 6 থেকে ক্লাস 8 থাকছে। তিনটি পাঠক্রম ভিত্তিতে পড়ানো হবে। এই সময়কালে পড়ুয়াদের কম্পিউটার কোডিং শেখার সুযোগ থাকছে। যাতে করে তারা চীনের মতো অল্প বয়সেই সফটওয়্যার এবং মোবাইল তৈরির টেকনিক শিখতে পারে। সেইসঙ্গে ছাত্র ছাত্রীরা বিশেষ কোন বিষয়ে আগ্রহ থাকলে, সেই বিষয়ের উপর ইন্টার্ন শিপ করতে পারবে। যেমন কোন বাচ্চার ফটোগ্রাফিতে শখ থাকলে, সে এই বিষয়ের উপর কোন অভিজ্ঞ ব্যাক্তির কাছে ইন্টার্ন শিপ করতে পারবে। এই বিভাগ সম্পন্ন করলে একটি সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
সব শেষে থাকছে 5+3+3+4- এর চতুর্থ ধাপ অর্থাৎ 4। এই ধাপে মোট ৪ বছর থাকছে। যেখানে থাকছে ক্লাস 9, 10, 11 এবং 12। এই সময়ে পড়ুয়াদের ৪ বছরে মোট ৮ টি সেমিস্টারে মত ৪০ টি পরীক্ষা হবে। ছাত্র ছাত্রীদের মুখস্থ বিদ্যা নয়, এবার পরীক্ষা হবে প্রতিভারও। তবে এবার থেকে চাইলে তারা নিজের ইচ্ছামত ভাষাতেও পরীক্ষা দিতে পারবে। এই সময় ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য একটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে সেটার উপরই জোর দেওয়া হবে।
এখানে কোন বিভাগের বাধ্যকতা থাকবে না। অর্থাৎ এতদিনের পড়াশুনার রীতি মেনে সায়েন্স, আর্টস এবং কমার্সের বিভেদ থাকছে না। এখানে ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের পছন্দ মত বিষয়কে বেছে নিতে পারবে শিক্ষার ক্ষেত্রে। কেউ চাইলে অঙ্কের সাথে ইতিহাসও পড়তে পারবে, আবার কেউ চাইলে সংস্কৃতের সাথে কেমিস্ট্রি ফিজিক্সও পড়তে পারবে। যার যে বিষয় পছন্দ, সে তাই বেছে নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিভাগের তালিকা তৈরি করা হবে। ছাত্র ছাত্রীরা সেখান থেকেই বিষয় পছন্দ করতে পারবে।
তবে রেজাল্টের নিয়মেও কিছু পরিবর্তন আসছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পরীক্ষার নম্বর নয়, পড়াশুনার সাথে সাথে পড়ুয়ার স্বভাব, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসের উপর নির্ভর করে ফাইনাল রেজাল্ট তৈরি করা হবে। তবে এর মধ্যে আবার ছাত্র নিজেকে নম্বর দেওয়ার অধিকারী থাকবে। সেইসঙ্গে পড়ুয়ার শিক্ষক এবং বন্ধুরাও তাঁকে নম্বর দেওয়ার অধিকার পাবে। এইভাবে এই বিভাগ সম্পন্ন করলে একটি সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
গ্রাজুয়েশনের ক্ষেত্রেও বদল আসছে। কোন ছাত্র ক্লাস 12 এর পর যদি মনে করে সে যথাযথ নম্বর পায়নি, সেক্ষেত্রে সে আবারও পরীক্ষা দিতে পারবে। সেই নম্বর তার পূর্বের ক্লাস 12 এর নম্বরের সাথে যুক্ত হবে। সেই ভিত্তিতেই কাট অফ নম্বরের হিসাবে কলেজে ভর্তি হতে পারবে।
গ্রাজুয়েশনের পড়াশুনাকে ৩ বছর এবং ৪ বছরের ভাগে যেমন ছিল, তেমনই থাকছে। তবে এক্ষেত্রে বদল ঘটছে- পূর্বে অনেক ছাত্র ছাত্রী কলেজে ভর্তি হয়ে ৩ বছর বা ৪ বছরের কোর্স সম্পূর্ণ না করে মাঝ পথেই পড়া ছেড়ে দিত। সেক্ষেত্রে তারা কোন সার্টিফিকেট পেতেন না। আবার যদি পড়া শুরু করতে চাইত, তাহলে নতুন করে প্রথম বর্ষে অ্যাডমিশন নিতে হত।
তবে এক্ষেত্রে যদি কোন ছাত্র প্রথম বর্ষের পর আর পড়াশুনা না করতে চায়, তাহলে কোন অসুবিধা হবে না। এক্ষেত্রে প্রতি বছরের শেষেই একটি করে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। যাতে করে ছাত্র ছাত্রীদের সুবিধা হবে। পড়ুরারা বিভিন্ন বিষয় একসঙ্গে পড়তে পারবে।
এক্ষেত্রে প্রথম বর্ষের শেষে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। দ্বিতীয় বর্ষের শেষে ডিপ্লোমা দেওয়া হবে, তৃতীয় বর্ষের শেষে ব্যাচেলার্স ডিগ্রি দেওয়া হবে এবং চতুর্থ বর্ষের শেষে রিসার্চের সার্টিফিকেটের সাথে ব্যাচেলার্স ডিগ্রিও দেওয়া হবে। এবার থেকে সবকিছু ডিজিটাল ভিত্তিতে করা হবে। এই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় আশা করা যাচ্ছে পড়ুয়াদের উপর পড়াশুনার চাপ পড়ার বদলে, তারা শিক্ষাকে বন্ধুর মত করে দেখবে।
বিপিন রাওয়াতের মন্তব্য
সম্প্রতি ভারতের এই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে সিডিএস বিপিন রাওয়াত (Bipin Rawat) জানিয়েছেন, এই নতুন নিয়ম চালু হওয়ার ফলে শিক্ষায় বড় পরিবর্তন দেখা দেবে। যার ফলে সেনাবাহিনীতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও যুবক নিয়োগ সম্ভব হবে। বিশেষত কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার এই নতুন নিয়মের ফলে যুবসমাজ একটি বড় সুবিধা পাবে। সেই সঙ্গে তৈরি থাকতে হবে শিক্ষকদেরও’।