বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান বিশ্বে দ্রুত হারে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ুর। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণের পরিমানও। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে ইতিমধ্যেই মেরু প্রদেশের বরফ গলতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই, বিঘ্নিত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও।
এই সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন যে, চলতি দশকে পৃথিবীতে বিরাট জলবায়ুগত পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। কিন্তু, এবার যে তথ্য উঠে আসছে তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই!
একদল বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিকতম গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পৃথিবী এখন ষষ্ঠ গণ-বিলুপ্তির প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ পশু-পাখি-মানুষ সহ সমস্ত জীবজগতই এবার অবলুপ্ত হতে চলেছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে ঘটতে চলেছে মাস এক্সটিঙ্কশন (Mass Extinction) বা গণ-বিলুপ্তি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রবার্ট কাউই-র নেতৃত্বে একদল গবেষক এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। জানা গিয়েছে যে, এর আগে প্রতিটি গণ বিলুপ্তির ক্ষেত্রে দায়ী ছিল কোনো না কোনো প্রাকৃতিক বা মহাজাগতিক ঘটনা। তবে, এবার গবেষণা বলছে, এই গ্রহের ষষ্ঠ গণ-বিলুপ্তি হতে চলেছে মানুষের কারণেই।
সম্প্রতি “বায়োলজিক্যাল রিভিউস” নামক বৈজ্ঞানিক জার্নালে এই গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, একের পর এক জীবের প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরেই এই সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই, বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। আর এই সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে, গণ-বিলুপ্তির আর বেশি বাকি নেই!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, যখন কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ প্রজাতির আর একটিও সদস্য জীবিত না থাকে, তখন সেটিকে পৃথিবীর বুক থেকে অবলুপ্ত বলা হয়। আর গণ-বিলুপ্তি মানে, গোটা জীব জগতেরই একইসাথে অবসান। এমন ঘটনা এর আগেও বিশ্বে ঘটেছে।
কখনও গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষে, কখনও বা আগ্নেয়গিরির প্রবল অগ্ন্যুৎপাতের মত ঘটনায় মোট পাঁচবার পৃথিবীতে গণ-বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। তবে, এর আগে মানুষের কারণে গণ-বিলুপ্তি কখনোই ঘটেনি। পাশাপাশি, এই গ্রহের ষষ্ঠ গণ-বিলুপ্তির ঘটনায়, সমস্ত মানব সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও, অনেক বিজ্ঞানীই অবশ্য এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। বরং, তাঁরা নিজেদের বক্তব্যের স্বপক্ষে আইইউসিএন বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার-এর রেড লিস্টের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই লিস্টকে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যগত স্বাস্থ্যের সূচক বলে ধরা হয়।
এদিকে, রবার্ট কাউই-র গবেষণা দলের মতে, এই লিস্ট অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ সংরক্ষণের মানদণ্ড নির্ভর করে সমস্ত প্রজাতিকে নিয়ে। কিন্তু, অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সামান্য অংশকে এই তালিকায় ধরা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি, অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের বিলুপ্তির প্রকৃত সংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে, আমরা যে সত্যিই ষষ্ঠ গণ-বিলুপ্তির সূচনার সাক্ষী, তা ভালোভাবে বোঝা যেত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।