“খিদে পেয়েছিল কিন্তু বাইরে যেতে ইচ্ছে করছিলনা”, নিজের গার্লফ্রেন্ডকে কেটে তাঁর মাংস খেয়ে জানালেন যুবক

বাংলা হান্ট ডেস্ক: দিনটা ছিল ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি। একাতেরিনা জিনোভিয়েভা (Ekaterina Zinovyeva) নামের এক যুবতী সন্ধ্যে নাগাদ তাঁর অফিস থেকে বাড়িতে পৌঁছেছিলেন। সেখানে তিনি দেখেন যে, তাঁর দুই বন্ধু ২০ বছর বয়সী ম্যাক্সিম গোলভাতস্কিখ এবং ইউরি মোজনভ পার্টি করছেন। তাঁরা দু’জনেই নেশাগ্রস্ত ছিলেন। এমতাবস্থায়, ওই দুই বন্ধু একাতেরিনাকে বলেন, “আজকে আমরা একটি বিশেষ খাবার তৈরি করেছি। সেটা খেয়ে জানাও কেমন লাগল?” একতেরিনা তখন ক্ষুধার্ত থাকায় সেই খাওয়ার খেয়ে নেন। কিন্তু যখন তিনি সেই খাওয়ারের আসল রহস্য জানতে পারেন তখন তিনি চমকে যান। বর্তমান প্রতিবেদনে সেই শিউরে ওঠা কাহিনিটিই বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপিত করা হল।

মূলত, এই ঘটনাটি ঘটেছে রাশিয়ায়। সেখানে ১৬ বছরের কিশোরী কারিনা বার্দুচিয়ান (Karina Barduchian) তার পরিবারের সাথে থাকত। সে কবিতা ও গল্প লিখতে খুব পছন্দ করত। পাশাপাশি, তার লেখার প্রশংসাও করত সকলে। এছাড়াও, তার গানের প্রতিও দুর্বলতা ছিল। বিশ্বের নানান ভাষার গান মনোযোগ দিয়ে শুনত সে। এমতাবস্থায়, সে তার পছন্দের সঙ্গীতের ধারার প্রসঙ্গে নিজে থেকেই গবেষণা শুরু করে খুঁজে বের করতে থাকে যে তাঁর পছন্দের সঙ্গীতের জগতে কোন কোন জনপ্রিয় শিল্পী রয়েছেন।

তখনই এই সন্ধানে সে ম্যাক্সিম গোলভাতস্কিখ নামের এক যুবকের কথা জানতে পারে। ম্যাক্সিমের জীবনযাপন ছিল বেশ অদ্ভুত। তিনি খুব অদ্ভুত পোশাক পরতেন এবং ভ্যাম্পায়ারের মত লুক নিয়েই থাকতে পছন্দ করতেন। একটি মিউজিক কনসার্টে ম্যাক্সিমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল কারিনার। তারপরেই ম্যাক্সিমের ভক্ত হয়ে যায় সে। এই প্রসঙ্গে ডেইলি মেইল মারফত জানা গিয়েছে, কারিনার মা নাদিয়া এই বিষয়টি জানতে পেরে তখন তিনি কারিনাকে ম্যাক্সিমের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেন। কিন্তু ম্যাক্সিমের ক্রেজ এতটাই বেশি ছিল যে কারিনা তাঁর সাথে গোপনে দেখা করতেন। যা তার মা কখনও জানতে পারেননি। এমনকি, তারা প্রেমের সম্পর্কও লিপ্ত হয়।

এমতাবস্থায়, ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি কারিনা খুব ভোরে স্কুলে চলে যায়। স্কুল শেষ হওয়ার সাথে সাথে সে তার বন্ধুর বাড়িতে গ্রুপ স্টাডি করতে গিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন সকালে কারিনা বাড়িতে না পৌঁছতে তাঁর মা নাদিয়া কারিনার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করেন তাঁর মেয়ে কোথায় রয়েছে? তারপরেই তিনি জানতে পারেন কারিনা এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি ফোন পেয়ে সন্ধ্যাবেলায় কোথাও চলে যায়।

কারিনার ঘর থেকে মেলে ডায়েরি: এদিকে, নাদিয়া কারিনার আরও বন্ধুদের ফোন করলেও কোথাও থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপর নাদিয়া সরাসরি পুলিশের কাছে বিষয়টি জানালে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরবর্তী দুই সপ্তাহ ধরে পুলিশ কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি। এদিকে কারিনার ঘর থেকে এটি ডায়েরি খুঁজে পান নাদিয়া। সেখানে ম্যাক্সিম নামের একজনের নাম লেখা ছিল। তারপর বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি।

ডাস্টবিনে পাওয়া যায় কারিনার মৃতদেহ: এদিকে, নাদিয়া ম্যাক্সিমের বিষয়টি পুলিশকে জানালেও পুলিশ মনে করেছিল যে, ম্যাক্সিম হয়তো কারিনার কবিতার একটি চরিত্র মাত্র। বাস্তব জীবনে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। তারপর ঠিক দুই সপ্তাহ পরে, পুলিশের কাছে একটি ফোন আসে। যেখানে একজন ব্যক্তি পুলিশকে জানান যে, তিনি একটি ডাস্টবিন থেকে খুব তীব্র গন্ধ পাচ্ছেন। তারপর ওই ডাস্টবিন থেকেই মেলে কারিনার মৃতদেহ। এমতাবস্থায়, তার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। এদিকে, তখনই পুলিশ একাতেরিনার কাছ থেকে একটি ফোন পান। তিনি পুলিশকে জানান, ওইদিন রাতে কারিনা তাঁর বাড়িতে এসেছিল। তাঁরা সেখানে পার্টি করেন। পাশাপাশি, সেখানে ম্যাক্সিম সহ আরও কিছু বন্ধু উপস্থিত ছিল। এমতাবস্থায়, পার্টির পর একাতেরিনাকে ঘুমোতে চলে যান।

একাতেরিনাকে কারিনার মাংস খাওয়ানো হয়েছিল: এদিকে, তারপরের দিন ঘুম থেকে উঠে একাতেরিনা কারিনা কোথায় তা ম্যাক্সিম এবং ইউরির কাছে জানতে চান। তখন তাঁকে জানানো হয় সে বাড়ি চলে গেছে। এমতাবস্থায়, একাতেরিনাও অফিসে চলে যান। অফিস থেকে ফিরে একাতেরিনাকে ওই দিন রাতে কারিনার মাংস খাওয়ানো হয়েছিল। যা তিনি বুঝতে পারেন নি। সেই মাংস খাওয়ার সাথে সাথেই ম্যাক্সিম তাকে জানান যে এটা কারিনার মাংস। একতারিনা একথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

murder1

একাতেরিনা জানিয়েছেন, ম্যাক্সিম প্রথমে কারিনার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তারপর ম্যাক্সিম এবং ইউরি কারিনাকে বাথটবে ডুবিয়ে হত্যা করেন। এরপর কারিনার দেহকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেন ওই দু’জন। এদিকে, একেতেরিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ম্যাক্সিম ও ইউরিকে গ্রেফতার করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তাঁরা কারিনাকে খুনের পেছনে এক অদ্ভুত কারণের কথা জানান। মূলত, যেদিন একাতেরিনার বাড়িতে পার্টি ছিল, তখন তাঁর বাড়িতে কোনো খাওয়ার ছিল না। ছিল শুধু মদ। এমন পরিস্থিতিতে ওই দুই বন্ধু খাওয়ার কিনতে বাইরে না গিয়ে কারিনাকেই “খাদ্য” হিসেবে ডেকে আনেন। তারপরেই ওই নৃশংস ঘটনা ঘটান তাঁরা। এদিকে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাক্সিমকে ১৯ বছরের এবং ইউরিকে 18 বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর