বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে পড়শি দেশ পাকিস্তানের সম্পর্ক প্রায়শই চরমে ওঠে। এমনকি, ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার মত গুরুতর অভিযোগও উঠেছে ইমরান খানের দেশের বিরুদ্ধে। কিন্তু, এবার যা ঘটেছে তাতে রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। চলতি সপ্তাহেই ভারতের দিক থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র “দুর্ঘটনাবশত” পাকিস্তানের দিকে চলে যায়। আর তারপর থেকেই চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে এই পড়শি দেশ।
যদিও, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক বিবৃতির মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে যে, “মার্চ মাসের ৯ তারিখ নিয়মমাফিক রক্ষণাবেক্ষণের সময়ে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাবশত ক্ষেপণাস্ত্রটি পাকিস্তানের দিকে উড়ে গিয়েছে। ভারত সরকার এই বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের একটি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রটি অবতরণ করেছে। এই ঘটনা অত্যন্ত অনুশোচনীয়। তবে, সৌভাগ্যবশত এই দুর্ঘটনার ফলে কোনো প্রাণহানি হয়নি।”
যদিও, এই প্রসঙ্গে পাকিস্তান দাবি করেছে যে, প্রায় ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় শব্দের তিনগুণ বেগে উড়ে যাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রটি তাদের আকাশসীমার ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ভেতরে প্রবেশ করে আসে। পাশাপাশি, ক্ষেপণাস্ত্রটিতে কোনো ওয়ারহেড না থাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। তবে, পাকিস্তান সমগ্র ঘটনার তদন্ত দাবি করে জানিয়েছে, পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এই ধরনের যে কোনো ঘটনা যুদ্ধের কারণও হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, ভুলবশত নির্দিষ্ট কোন ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোঁড়া হয়েছিল তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা না হলেও সূত্র জানিয়েছে যে, ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্রহ্মোস ল্যান্ড অ্যাটাক সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ছিল যা একটি প্রচলিত (অ-পারমাণবিক) অস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি Mach 2.8 অর্থাৎ শব্দের প্রায় তিনগুণ গতিতে ফায়ার হতে সক্ষম। পাশাপাশি, জানা গিয়েছে, উত্তর ভারতের একটি বায়ুসেনার ঘাঁটি থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়। তবে, একাধিক সুরক্ষার পরও কীভাবে ভুলবশত ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোঁড়া হল তা তদন্ত করবে কোর্ট অফ ইনকোয়ারি৷
যদিও, এই ঘটনায় শুক্রবার ইসলামাবাদে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তান। পাশাপাশি, এই আকষ্মিক সুপারসনিক মিসাইলের অবতরণে পাকিস্তানিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। সেদেশের সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ধরনের দুর্ঘটনা যাত্রীবাহী বিমান এবং নাগরিকদের জীবনকে বিপদে ফেলতে পারে। এছাড়াও, পাকিস্তান জানিয়েছে, এই ধরণের অবহেলার পরিণতিগুলি মনে রাখা উচিত এবং এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের লঙ্ঘন আর না ঘটে।
ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্রটি হরিয়ানার সিরসা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং সন্ধ্যা ৬.৪৩ মিনিট নাগাদ সুরতগড় হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। তারপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মিয়া চুন্নু শহরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রটি অবতরণ করে। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছেন যে, ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে নিরীহ জীবনকে বিপদে ফেলেছে। এছাড়াও, সৌদি ও কাতার এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটও বিপদের মুখে পড়েছে। ভারতের জবাব পাওয়ার পর পাকিস্তান তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি, কুরেশি আরও জানান, ঘটনার পর P-5 দেশগুলোকে (জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য) দফতরে ডেকে সমগ্র বিষয়টি জানানো হবে। এছাড়াও, ভারতকে এর জবাব দিতে হবে বলেও দাবি তুলেছেন তিনি।
এদিকে, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) মুইদ ইউসুফ “সেন্সিটিভ” প্রযুক্তি পরিচালনায় ভারতের ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ইউসুফ বেশ কয়েকটি টুইট বার্তায় বলেছেন যে, ভারত সরকার পাকিস্তানকে ঘটনাটি জানাতেও তেমন চেষ্টা করেনি। তিনি জানান, “এই ধরনের সেন্সিটিভ প্রযুক্তিগুলি পরিচালনা করার জন্য ভারতের ক্ষমতা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে এই ঘটনা।”
পাকিস্তানি NSA বলেছে যে, ক্ষেপণাস্ত্রটি আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ উড়ানপথের কাছাকাছি চলে এসেছিল এবং নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিও দিয়েছে। এছাড়াও, ইউসুফ ভারতে ইউরেনিয়াম চুরির বেশ কয়েকটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে, “সাম্প্রতিক অতীতে ইউরেনিয়াম পাচারের জন্য মানুষদের গ্রেফতার করা হয়েছে।”