বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আর সাতদিন পরেই রাজ্যে প্রথম দফার বিধানসভা নির্বাচন। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করে চলেছে। বিশ্লেষকদের মতে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের মত নির্ণায়ক হতে পারে।
রাজ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা আছে। মুসলিম ভোটার ১০০ থেকে ১২৫ টি আসনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৯০টি আসনে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের দখলে ছিল। কিন্তু এবার বিজেপি এবং তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই ত্রিমুখী করতে আর মুসলিম ভোটারদের নিজেদের কাছে টানার জন্য বাম আর কংগ্রেস ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার দলের সঙ্গে জোট করেছে। আর এরপর থেকেই রাজ্যে সমীকরণ বদলাচ্ছে।
আরেকদিকে AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নজরও বাংলার মুসলিম ভোটারদের উপর রয়েছে। AIMIM বাংলার ১০ থেকে ২০টি মুসলিম ভুল আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এই কারণে এবার মুসলিম বহুল আসনগুলো ত্রিমুখী লড়াইয়ের সাক্ষী হতে চলেছে।
রাজ্যের মুসলিম ভোটাররা এখন চুপ করে আছে, আর এই কারণে সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই চিন্তা বেড়ে গিয়েছে। আরেকদিকে, বিজেপির থেকে কড়া টক্করের আশঙ্কার থাকা তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে যেমন দলের ভাঙন নিয়ে চিন্তিত, তেমনই মুসলিম ভোটারদের নিয়েও বেশ চিন্তিত আছেন। বাংলার নির্বাচনে ISF আর AIMIM লড়াইয়ে নামার পর দিদির চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে।
জলপাইগুড়ির একটি সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ‘হিন্দু ভোট বিজেপি নেবে, মুসলিম ভোট AIMIM নেবে আর আমরা কি কলা খাব?” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বয়ানে ওনার অন্দরে মুসলিম ভোট নিয়ে থাকা ভয় প্রকাশ্যে এসেছিল। যদিও তখন রাজ্যে আব্বাস সিদ্দিকী দল ঘোষণা করেছিল না, আর আব্বাসের দল ঘোষণার পর মুসলিম ভোটারদের নিয়ে মমতা ভয় আরও বেড়ে গিয়েছে।
বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট, তৃণমূল কংগ্রেস এবং আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দলের মধ্যে যদি মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যায়, তাহলে সবথেকে বেশি লাভবান হবে বিজেপি। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখা বিজেপির এখন একটাই আশা হল, এই ত্রিমুখী লড়াইয়ে তাঁদেরই যেন সবথেকে বেশি লাভ হয়। মালদহের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলায় বিজেপি একটি লোকসভা আসনে জয়লাভ করেছিল। আর একটি আসনে মাত্র কয়েক হাজার ভোটে জয়ের স্বাদ পায়নি গেরুয়া শিবির।
এছাড়াও মুসলিম বহুল উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে বিজেপি প্রথমবার জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। এছাড়াও সম্প্রতি তৃণমূল এবং অন্য দল থেকে মুসলিম নেতা এবং কর্মীরা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আরেকদিকে, মুসলিম মহিলারাও বিজেপির দিকেই ঝুঁকছে। রাজ্যের অনেক মুসলিম মানুষই এবার পরিবর্তনের দাবি করছে।
রাজ্যের ১২ থেকে ১৫ লক্ষ বাংলাভাষী মুসলিম পরিবারে প্রভাব আছে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর। আইএসএফ-এর প্রধান আব্বাস সিদ্দিকীর প্রতি মুসলিম যুবকদের অনেক টান আছে। আর এই পরিসংখ্যানই তৃণমূলের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্যে মোট ২৯৪ টি বিধানসভা আসন আছে। তাঁর মধ্যে ৪৬ টি আসনে মুসলিমদের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। ১৬ টি আসনে মুসলিমদের সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি। ৩৩ টি আসনে মুসলিমদের সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি। আ৪ ৫০ টি আসনে মুসলিমদের সংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, নদিয়া আর বীরভূম জেলায় মুসলিম ভোটারদের কথা মাথায় রেখে প্রার্থী মনোনীত করা হয়।