ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রূপপর্বের এই ৯টি ম্যাচ কোয়ার্টার বা সেমির আগেই উপহার দেবে উত্তেজক ফুটবল

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টার অপেক্ষা। তারপরেই কাতারের মাটিতে আরম্ভ হয়ে যাবে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এই সময়টা যেন উৎসবের মতোই। কিন্তু সমস্যাটা হল ফুটবলপ্রেমী বেশিরভাগ মানুষই অন্যান্য উৎসবের সময় যেমন ছুটি পেয়ে থাকেন, ফুটবল বিশ্বকাপের সময় তেমনটা পাবেন না। ফলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিশ্বকাপ নকআউট পর্বে বড় দলগুলি যখন একে অপরের মুখোমুখি হবে তখন যেন তেন প্রকারণে একটি দুটি দিন নিজ নিজ কাজ বা পড়াশুনো ম্যানেজ করে নেবেন সকলেই। কিন্তু গ্রুপ পর্ব চলাকালীন অফিস, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপে কি করে বিশ্বকাপের আমেজ অনুভব করবেন সেই নিয়ে চিন্তিত অনেকেই।

তাদের সুবিধার জন্যেই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন। বিশ্বকাপের শুরুর দুটি দিন বাদ দিয়ে গ্রুপপর্ব চলাকালীন অর্থাৎ ২রা ডিসেম্বর অবধি প্রতিদিনই চারটি করে ম্যাচ আয়োজিত হবে। প্রত্যেকটি ম্যাচ বসে বসে দেখা সকলের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই আমরা আপনাদের বলব গ্রুপ পর্বের সেই ৯ টি ম্যাচের কথা যেগুলি দেখলে আপনি কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমিফাইনাল শুরু হওয়ার আগে থেকেই বিশ্বকাপের আমেজ অনুভব করতে পারবেন। প্রত্যেকদিন আপনাদের কাজ ম্যানেজ করে সময় বার করার দরকার নেই। আমরা বলব সেই ৯ টি ম্যাচের কথা এবং কেন সেগুলি উত্তেজক হতে চলেছে এবং কেন আপনারা ম্যাচগুলি দেখলে আপনারদেরই লাভ, সেই সম্পর্কে।

নেদারল্যান্ডস বনাম সেনেগাল (২১শে নভেম্বর, রাত ৯.৩০): বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘এ’-তে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী দুই দলের লড়াইয়ের দিকে আপনাদের চোখ রাখতেই হবে কারণ এই ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হবে বর্তমান বিশ্বের দুই সেরা ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডায়েক এবং কালিদাউ কুলিবালী। তবে ডাচ-ডিফেন্ডার ভ্যান ডায়েক কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় থাকবেন কারণ তার লিভারপুলের প্রাক্তন সতীর্থ ‘সাদিও মানে’কে এই ম্যাচে পাবে না সেনেগাল। নজর থাকবে তরুণ প্রতিভাবান ডাচ ফরোয়ার্ড কোডি গ্যাপকোর দিকে। খাতায় কলমে ডাচরা এগিয়ে থাকলেও এবং সেনেগালের সাদিও মানের মতো তারকা চোটের জন্য বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেও আফ্রিকার দলটিকে হালকা ভাবে নেওয়ার উপায় নেই। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের অনেক বড় ক্লাবে তাদের অনেক ফুটবলাররাই খেলেন যারা এই বিশ্বকাপে স্কোয়াডে রয়েছেন। তাছাড়া দুই দলই নিজেদের শেষ পাঁচ ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি।

জার্মানি বনাম জাপান (২৩শে নভেম্বর, সন্ধ্যা ৬.৩০): দুটি দলই নিজেদের সেরা ছন্দে নেই। কিন্তু এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ফুটবল খেলিয়ে দেশ এবং চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা যখন একে অপরের মুখোমুখি হবে, তখন সেই ম্যাচের দিকে নজর না রেখে উপায় নেই। দুই দলই দলগত পারফরম্যান্সে বাজিমাত করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে। জার্মানির নিজেদের সেরা ছন্দে না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথম ম্যাচেই জয় পেতে চাইবে জাপান। দুই দলই যেহেতু টিম ওয়ার্কের ওপর অত্যন্ত বেশি বিশ্বাসী, তাই কোন নির্দিষ্ট তারকার দিকে আলাদা করে নজর রাখার দরকার নেই।

ব্রাজিল বনাম সার্বিয়া (২৫শে নভেম্বর, রাত ১২.৩০): খেলাটি ২৪ তারিখ থাকলেও ভারতীয় সময় রাত বারোটার পর আয়োজিত হয় এটি ২৫ তারিখে পড়ছে ভারতীয় দর্শকদের জন্য। আসন্ন কাতার বিশ্বকাপ এই দিনই প্রথম মাঠে নামবে সাম্বা ব্রিগেড। খাতায় কলমে অত্যন্ত শক্তিশালী স্কোয়াড তাদের। কিন্তু তাদের যোগ্য পরীক্ষা নেবে জায়ান্ট কিলার সার্বিয়া। গত বছরের নভেম্বরে নিজেদের গ্রুপের শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিল দেশটি। এই মরশুমে ইপিএলে ৯ গোল করে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তাদের তারকা স্ট্রাইকার মিত্রোভিচ। এইবারদের মুখোমুখি হওয়ার দিনও জ্বলে উঠতে চাইবেন তিনি।

ফ্রান্স বনাম ডেনমার্ক (২৬শে নভেম্বর, রাত ৯.৩০) : গতবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা খুব একটা ভালো ফর্মে নেই। তারা গত বছর নেশন্স লিগ জিতলেও ইউরো কাপে শেষ ১৬ পর্যায় থেকে ছিটকে গিয়েছিল। ২০০৬, ২০১০ এবং ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে দেশগুলি ট্রফি ঘরে তুলেছিল তারা তাদের পরের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছে। ফ্রান্স কি সেই অভিশাপ কাটিয়ে উঠতে পারবে। কাজটা মুশকিল কারণ ডেনমার্ক চলতি বছরে ইতিমধ্যেই ফ্রান্সকে দুবার হারিয়েছে। গতবারের ইউরো কাপে সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছানো নেটওয়ার্ক দল হিসেবেও যথেষ্ট শক্তিশালী। বিশ্বকাপে সেই দুটি হারের বদলা ফ্রান্স নিতে পারে কিনা সেই দিকে নজর থাকবে সকলের। ফ্রান্সের দুই তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং করিম বেনজেমার পাশাপাশি নজর থাকবে গত ইউরো কাপে মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়া ডেনমার্কের তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন যিনি বর্তমানে নিজের নতুন ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন, তিনিও কেমন পারফরম্যান্স করেন সেই দিকেও নজর রাখতেই হবে।

স্পেন বনাম জার্মানি (২৮শে নভেম্বর, রাত ১২.৩০): ২৭ তারিখ ম্যাচটি থাকলেও ভারতীয় সময় অনুযায়ী ম্যাচটি শুরু হবে ২৮ শে নভেম্বর আরম্ভ হওয়ার পর। এবার একই গ্রুপে রয়েছে দুই ইউরোপিয়ান জায়ান্ট। অর্থাৎ একটু এদিক-ওদিক হলেই তাদের মধ্যে যে কোনও একটি দেশ গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে যেতে পারে। দুই দলেই গত কয়েক বছরে এসেছে আমূল পরিবর্তন। তারুণ্যে ভরা স্পেন, কিভাবে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে তৈরি জার্মানি দলের বিরুদ্ধে খেলবে, সেদিকে নজর রাখতেই হবে। তবে সাম্প্রতিক পর্বের ভিত্তিতে একটু এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে স্পেন।

পর্তুগাল বনাম উরুগুয়ে (২৯শে নভেম্বর, রাত ১২.৩০): ২৮ তারিখ ম্যাচটি থাকলেও ভারতীয় সময় অনুযায়ী ম্যাচটি শুরু হবে ২৯ শে নভেম্বর আরম্ভ হওয়ার পর। মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সাথে সাথে পর্তুগাল স্কোয়াডে রয়েছে একাধিক তারকা ফুটবলার এবং প্রতিভাবান তরুণ। কিন্তু এখন অবধি পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে পাননি যে কিভাবে এতজন ভালো ফুটবলারকে একসাথে কাজে লাগানো যায়। ফলে খাতায়-কলমে শক্তিশালী দল হলেও প্রত্যাশমতো ফল করতে পারে না পর্তুগাল। এদের তাদের বিপক্ষে থাকবে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে ভরপুর উরুগুয়ে। ফ্রেডরিকো ভালভার্ডের মতো অলরাউন্ড ফুটবলার, ডারউইন নুনেজের মতো দক্ষ স্ট্রাইকারকে নিয়ে মাঠে নামবে তারা। সঙ্গে থাকছে কাভানি, সুয়ারেজ, গোদিনদের মতো অভিজ্ঞরা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কাছে হেরেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল পর্তুগাল। সেই হারের বদলা তারা কি এবার দিতে পারবে?

ওয়েলস বনাম ইংল্যান্ড (৩০শে নভেম্বর, রাত ১২.৩০): বিশ্বকাপের আগে তারা ছয় ম্যাচে জয় নেই ইংল্যান্ডের। দলে একাধিক তারকা ফুটবলার। কিন্তু ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট তাদের ঠিকমতো ব্যবহার করতে এখনও অবধি ব্যর্থ। গতবছর ইউরো ফাইনালে হারের পর থেকেই অত্যন্ত খারাপ অবস্থা তাদের। একই অবস্থা গ্যারেথ বেলের ওয়েলসেরও। বিশ্বকাপের আগে টানা ৫ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি তারা। এমন অবস্থায় তাদের মধ্যে ম্যাচটি অত্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি ও উত্তেজক হতে পারে। ২০১৮ বিশ্বকাপও মুখোমুখি হয়েছিল দুই প্রতিপক্ষ। তারকা গ্যারেথ বেলের দুর্দান্ত ফ্রি-কিক গোলের পরেও সেবার হার মানতে হয়েছিল ওয়েলসকে। এবার কি সেই হিসাব বদলাতে পারবে তারা?

পোল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনা (১লা ডিসেম্বর, রাত ১২.৩০): ম্যাচটি আসলে ৩০শে নভেম্বর আয়োজিত হলেও ভারতীয় সভায় অনুযায়ী পয়লা ডিসেম্বরেই ম্যাচটি দেখতে পাবে ভারতবাসীরা। খাতায়-কলমে আর্জেন্টিনার এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। পোল্যান্ডের মত মাঝারী মনের প্রতিপক্ষ তাদের আটকাতে পারবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। এই ম্যাচটা বিশেষ কারণ বিশ্ব ফুটবলের দুই অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসি এবং রবার্ট লেওয়ানডোস্কি এই ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হবে। নিজ নিজ দলের হয়ে ক্লাব ফুটবলে দুজনেই সেরা ছন্দে রয়েছেন। দুজনেই এই ব্যাচ গোল পান কিনা সেই দিকে নজর থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের।

ক্রোয়েশিয়া বনাম বেলজিয়াম (১লা ডিসেম্বর, সন্ধ্যা ৮.৩০): গতবারের বিশ্বকাপের রানার্স আপ এবং বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলির মধ্যে একটি যখন একে অপরের মুখোমুখি হবে তখন আপনাকে নজর রাখতেই হবে টিভি স্ক্রিনে। খাতায় কলমে কেভিন ডি ব্রুইন, রোমেলু লুকাকু, থিবো কুর্তুয়ার মতো ফুটবলারদের দ্বারা সমৃদ্ধ বেলজিয়াম অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু এটি শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে ক্রোয়েশিয়া তথা এইমুহূর্তে বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের। গতবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জয়ী তারকা ৩৫ বছর বয়সে সবচেয়ে আরও একবার নিজেকে উজাড় করে দিতে তৈরি।


Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর