বাংলা হান্ট ডেস্ক: মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা তাকে একেবারে মন থেকে ভেঙে দেয়। ঠিক এইরকমই এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল মাত্র ১৬ বছর বয়সী এক মেয়ের সাথে। ২০০৯ সালের ৪ মে, যখন এই মেয়েটি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য কলেজে পড়াশোনা করছিল, ঠিক সেই সময়ের একদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে একজন অ্যাসিড ছোঁড়ে তার দিকে।
এই হামলায় মেয়েটির মুখ সম্পূর্ণ ঝলসে যায়। শুধু তাই নয়, সে হারিয়ে ফেলে তার দৃষ্টিশক্তিও। ভয়াবহ এই ঘটনায় সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল তার জীবনে। কিন্তু প্রায় ১০ বছর পরে তার জীবনে এমন কিছু ঘটেছিল, যেখান থেকেই সেই মেয়েটি নিজের মধ্যে সাহস সঞ্চার করে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র দিন, এই লড়াকু মেয়েটি তাঁর প্রেমিকের সাথে বাগদান করেছিলেন এবং ১ মার্চ ২০২১-এ তাঁরা দুজনেই গাঁটছড়া বাঁধেন। এই অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলাটির নাম হল প্রমোদিনী রাউল এবং তাঁর স্বামীর নাম সরোজ সাহু।
ওড়িশার জগৎসিংহপুরের বাসিন্দা, প্রমোদিনী রাউল এখন “রানি” নামেও পরিচিত। ২০০৯ সালে অ্যাসিড হামলার পর, তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল এবং তিনি তাঁর দৃষ্টিশক্তিও হারিয়েছিলেন।
এই প্রসঙ্গে রানী প্রমোদিনী বলেন যে, ৯ মাস চিকিৎসার পর অর্থের অভাবে তাঁর পরিবার তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং তিনি ৫ বছর বিছানাশয্যায় ছিলেন। তারপর প্রায় ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০১৪ সালে প্রমোদিনীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালেই একজন নার্স সেখানে একটি ছেলেকে নিয়ে আসেন, যার নাম ছিল সরোজ সাহু। পেশাগত ভাবে তিনি ছিলেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ।
এরপর প্রায়ই তাঁকে দেখতে হাসপাতালে আসতেন সরোজ। চিকিৎসকদের সহায়তায় রানি প্রমোদিনীকে ৪ মাসেই সুস্থ করে তোলেন সরোজ। তাঁর দেখাশোনা করার সময়ে সরোজ প্রমোদিনীর খাবার ও ওষুধের পুরো খেয়াল রাখতেন। এরপর ২০১৬ সালে, রানি তাঁর চিকিৎসার জন্য দিল্লি আসেন এবং সেখানে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।
যদিও, সরোজ তখন ওড়িশায় ছিলেন। এদিকে, রানি চলে যাওয়ার পর সরোজ বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি তাঁকে খুব মিস করছেন এবং তাঁকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না তিনি। সেদিনটা ছিল ১৪ জানুয়ারি, সরোজ তৎক্ষণাৎ রানিকে ফোন করেন এবং ভালবাসা প্রকাশ করে তাঁকে বিয়ে করতে চান বলে জানিয়েও দেন।
এটা শোনার পরই রানী জানান যে, “আমি তো চোখে দেখতেও পারি না, তাহলে আমি কীভাবে কারো বউ হতে পারব?” যদিও, কিছুদিন যাওয়ার পরই চোখের অস্ত্রোপচারের পর রানির দৃষ্টিশক্তি ২০ শতাংশ পর্যন্ত ফিরে আসে এবং এরপরে ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁরা একটি ক্যাফেতে বাগদান করেন এবং তারপর ১ মার্চ বিয়ে করেন। আজ তাঁরা দু’জনেই তাদের জীবনে খুব খুশি।
এই প্রসঙ্গে রানি প্রমোদিনী বলেন, “বর্তমান সময়ে দেখা যায় অনেক সম্পর্কই খুব দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ, অধিকারের লড়াই এর আসল কারণ। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে এমন কিছু ঘটেনি এবং আমরা দু’জনেই খুব খুশি।”