বাংলা হান্ট ডেস্ক: চলার পথে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে লক্ষ্যপূরণের দিকে নিজের একাগ্রতা বজায় রাখলেই পাওয়া যায় সাফল্য। প্রতিটি মানুষের সফলতার পেছনে রয়েছে এই মন্ত্রই। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এমন এক লড়াকু মহিলার প্রসঙ্গ আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করব যিনি নিজের ওপর ভরসা এবং সাহস অবলম্বন করেই তৈরি করেছেন এক অনন্য উত্তরণের কাহিনি (Success Story)। পাশাপাশি, হাজারও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েও নিজের লক্ষ্যকে স্থির রেখেছিলেন নীলম মোহন (Neelam Mohan)। আর তার ওপর ভর করেই বর্তমানে তিনি তৈরি করেছেন ১৩০ কোটির সাম্রাজ্য।
পড়াশোনা চলাকালীন বিয়ে হয়ে যায় তাঁর: এই প্রসঙ্গে “দ্য উইকেন্ড লিডার”-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে যে, নীলম মোহন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের ছাত্রী থাকার সময়ে অমিত মোহন নামের এক IIT-MBA Professional-এর সাথে তাঁর বিয়ে হয় যায়। এমতাবস্থায়, মাত্র ২১ বছর বয়সেই নীলমকে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে দিল্লি চলে আসতে হয়েছিল। এদিকে, নীলম প্রথম থেকেই নিজে থেকে কিছু করতে চাইতেন। আর সেই জন্যই তিনি ২২ বছর বয়সে “ফ্যাশন” নামে একটি কোম্পানি শুরু করেন। যদিও, ১৯৭৮ সালে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন।
তিন হাজার টাকার বেতনে কেরিয়ার শুরু: এরপরে, তিনি দিল্লিতে থাকার সময় একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে পুরুষদের পোশাক ডিজাইনের কাজ শুরু করেন এবং ইউপি এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের সাথে যুক্ত হয়ে যান। তখন তিনি প্রতি মাসে মাত্র তিন হাজার টাকা বেতন পেতেন। সেই চাকরির সময়ই নীলম তাঁর নিজের ব্যবসা শুরু করার কথা ভেবেছিলেন। পাশাপাশি, সেই পরিকল্পনাটিকে বাস্তবে রূপ দিতে নীলম তাঁর বন্ধু হরমিন্দর সালধির সাথে কাজ শুরু করেন। বন্ধু হরমিন্দর এবং সুশীল কুমারের সাথে ১৯৮৩ সালে অপেরা হাউস প্রাইভেট লিমিটেড নামে স্টার্টআপ কোম্পানি শুরু করেন নীলম। সেখানে তাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করতে শুরু করেন। এমনকি, একটা সময়ে ওই কোম্পানির টার্নওভার ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি পৌঁছে যায়।
হতে হয় সমস্যার মুখোমুখি: যদিও, নীলম যেমন সফলতা পাচ্ছিলেন, পাশাপাশি, একাধিক সমস্যার মুখোমুখিও হতে হয় তাঁকে। ব্যক্তিগত কারণে, ১৯৯১ সালে নীলম তাঁর স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে যান। এদিকে, এরপরে, অংশীদারদের সাথেও মতপার্থক্য দেখা দেয় তাঁর। এমনকি, একটা সময়ে নীলমকে ওই কোম্পানিতে তাঁর অংশীদারিত্ব ৩ কোটি টাকায় বিক্রি পর্যন্ত করতে হয়েছিল।
আবার নতুন করে শুরু করলেন নীলম: বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, নীলম হাল ছাড়েন নি। বরং ১৯৯৩ সালে তিনি ৪ জন দর্জিকে নিয়ে Magnolia Blossom নামে তাঁর নিজস্ব কোম্পানি শুরু করেন। নীলম তাঁর এই নতুন কোম্পানির জন্য ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় একটি বাড়ি কিনেছিলেন এবং সেই বাড়িটিকেই কারখানায় রূপান্তরিত করেছিলেন তিনি।
কোম্পানিটি লোকসানের সম্মুখীন হয়: ২০০২ সালে, নীলমের কোম্পানি লোকসানের সম্মুখীন হয়। এমতাবস্থায় তাঁর এক বন্ধু ওই কোম্পানির সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এদিকে ততদিনে নীলমের ছেলে সিদ্ধার্থ আমেরিকা থেকে পড়াশোনা শেষ করে ভারতে ফিরেছিলেন। মাকে দিনরাত কাজ করতে দেখে সিদ্ধার্থও তাঁকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন।
অবশেষে মেলে সফলতা: নীলমের পরিশ্রম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে তাঁর কোম্পানি পৌঁছে গিয়েছে ১৩০ কোটি টাকায়। বর্তমানে সিদ্ধার্থ এবং তাঁর স্ত্রী পল্লবী দু’জনেই ম্যাগনোলিয়া মার্টিনিক ক্লোথিং প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর পদে আসীন রয়েছেন। তাঁদের অফিসটি নয়ডায় অবস্থিত। এছাড়া একটি কারখানাও রয়েছে তাঁদের। সর্বোপরি, প্রবীণদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নীলম ২০০৯ সাল থেকে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পঞ্চবটি নামে একটি বাড়িও তৈরি করে দিয়েছেন।