বাংলা হান্ট ডেস্ক: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank Of India, RBI) এবার ঋণগ্রহীতাদের একটি বড় স্বস্তি দিয়েছে। অপরদিকে, তাদের একটি সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্ক ও ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানিগুলির উইলফুল ডিফল্টার (সামর্থ্য থাকলেও যে বা যারা ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়না) সংক্রান্ত ঘটনার সেটেলমেন্টের পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে পারে। RBI-এর নতুন নিয়ম অনুসারে, একদিকে যেমন ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে কোনো ঋণগ্রহীতাকে উইলফুল ডিফল্টার হিসেবে ঘোষণা করা সহজ হবে না। অন্যদিকে ডিফল্ট করছেন এমন ঋণগ্রহীতাদেরকে সেটেলমেন্টের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে কি দেশে বিজয় মালিয়া ও নীরব মোদীদের মতো বড় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে?
প্রকৃতপক্ষে, RBI তার নতুন নির্দেশিকাতে স্পষ্ট করেছে যে, ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক সংস্থাগুলি এখন উইলফুল ডিফল্টার এবং জালিয়াতির সাথে জড়িত সংস্থাগুলির সাথে কম্প্রোমাইজ করে সেটেলমেন্ট করতে পারে। অথবা টেকনিক্যালি তাদের ঋণ রাইট-অফ করা যেতে পারে। এই প্রথম RBI উইলফুল ডিফল্টার এবং লোন ফ্রডের জন্য একটি সেটেলমেন্টের ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে।
RBI-এর নতুন নির্দেশিকায় কি বলা হয়েছে: RBI এর নতুন ব্যবস্থায় বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ঋণখেলাপি হয়ে থাকেন বা কোনো সংস্থা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকে, তবে ব্যাঙ্ক এবং ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি কিছু কম অর্থের বিনিময়ে হিসেবনিকেশ করে লোনের সেটেলমেন্ট করতে পারে। এই সেটেলমেন্ট ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে কোনো আইনি বা ফৌজদারি ব্যবস্থা ছাড়াই করা হবে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কও এই নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কিছু নিয়ম-কানুন তৈরি করেছে। চলুন, তা জেনে নিই।
মূলত, বর্তমানে কোনো ঋণগ্রহীতা ডিফল্টার হলে বা কোম্পানির ব্যাঙ্ক লোন জালিয়াতির ক্ষেত্রে, সেটেলমেন্টের মূল্য বন্ধক রয়েছে এমন পণ্যের বর্তমান নিট মূল্যের চেয়ে কম হতে পারে না। এদিকে, ব্যাঙ্কগুলি ডিফল্টারের লোন রিস্ট্রাকচার করতে পারে না। পাশাপাশি তাকে নতুন লোনও দিতে পারে না।
বোর্ডের অনুমোদনের পর হয় সেটেলমেন্ট: এদিকে, RBI এই ধরণের লোন সেটেলমেন্ট করার নিয়মও ঠিক করেছে। লোন সংক্রান্ত কম্প্রোমাইজে হয় সেটেলমেন্ট নতুবা টেকনিক্যাল রাইট-অফের প্রতিটি ক্ষেত্রে, ব্যাঙ্কগুলিকে বোর্ড অফ ডাইরেক্টর থেকে অনুমোদন নিতে হবে। শুধু তাই নয়, কাউকে উইলফুল ডিফল্টার ঘোষণার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ঋণের কম্প্রোমাইজ সেটেলমেন্টের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ব্যাঙ্কের অপারেটিং অফিসের পরিবর্তে সুপারভাইজরি অফিসের উপর থাকবে।
এছাড়াও, ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ব্যাঙ্কগুলিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। ব্যাঙ্ক কম্প্রোমাইজ সেটেলমেন্ট অথবা টেকনিক্যাল রাইট-অফের পদ্ধতি লোনের ন্যূনতম সময়ের ভিত্তিতে এবং তার পরিবর্তে রাখা কোনো সম্পত্তির মূল্য হ্রাসের ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। শুধু তাই নয়, যে বোর্ড অফ ডাইরেক্টর অথবা কমিটি এই ধরণের ঋণ সেটেলমেন্টের অনুমোদন দেবে তাদের পদ ঋণ বরাদ্দকারী কর্মকর্তাদের চেয়ে উচ্চ পদমর্যাদার হওয়া উচিত।
১২ মাস পরেই নতুন লোন পাওয়া যাবে: RBI এই ব্যবস্থায় আরেকটি নিয়ম সামনে এনেছে। যদি উইলফুল ডিফল্টার অথবা ফ্রড করছে এমন কোম্পানি সেটেলমেন্ট অথবা টেকনিক্যাল রাইট-অফের পর নতুন লোন নিতে চায় তাহলে ব্যাঙ্কগুলিকে কমপক্ষে ১২ মাসের কুলিং পিরিয়ড ফর্মুলা অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ ১২ মাস পরই নতুন ঋণ বরাদ্দ করতে পারবে ব্যাঙ্কগুলি।
এমতাবস্থায় এই বিষয়টি যদি বিজয় মালিয়া এবং নীরব মোদীর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক লোন ডিফল্টের পর, তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যার কারণে তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাঁরা লোন সেটেলমেন্ট করার অবস্থায় ছিলেন না।