ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লড়াই করা এই প্রাক্তন সেনা ক্যাপ্টেনের ঠাঁই এখন বৃদ্ধাশ্রম

বাংলা হান্ট ডেস্ক: গতকাল গিয়েছে কার্গিল বিজয় দিবস (Kargil Vijay Diwas)। ১৯৯৯ সালে ২৬ জুলাইয়ের দিনেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলা ভয়াবহ কার্গিল যুদ্ধে সফলতা লাভ করে ভারতীয় সেনা। এমতাবস্থায়, দেশ রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের আমরা স্মরণ করছি। যদিও, আমাদের মাঝে বর্তমানে এমন অনেক সাহসী সৈনিক রয়েছেন যাঁরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তাঁদের অসীম সাহসিকতার মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করেছেন। যদিও, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজ তাঁরা রয়েছেন বিস্মৃতির পথে। তাঁদেরই মধ্যে একজন হলেন ক্যাপ্টেন দয়াল চাঁদ। যিনি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একজন গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক ছিলেন।

যদিও, এখন তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন। এমনকি, তিনি কোনোরকম সুযোগ-সুবিধাও পাননি। এদিকে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর ছেলেও মারা গিয়েছেন। এমতাবস্থায়, খবর পেয়ে স্পিকার গিরিশ গৌতম অবসরপ্রাপ্ত সেনা ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এছাড়াও, তিনি তাঁকে ৫০ হাজার টাকার একটি চেক দিয়ে সাহায্যের পাশাপাশি শাল দিয়ে সম্মানিত করেন।

উল্লেখ্য যে, দয়াল চাঁদ ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এক্কেবারে সামনে থেকে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু এরপর পরিস্থিতি এমনভাবে পাল্টে যায় যে, তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে এখন ভোপালের সারথি বৃদ্ধাশ্রমে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে, শর্ট সার্ভিস কমিশনে থাকায় তাঁরা পেনশন ও মেডিক্লেমের মতো সুবিধাও পান না।

ছেলের মৃত্যু ঘটে: সেনাবাহিনীতে জীবনের ৬ বছর অতিবাহিত করার পর ক্যাপ্টেন রায় দয়াল চাঁদ দেশে ও বিদেশের একাধিক কোম্পানি ও স্কুলে কাজ করেন। এমনকি, সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু কেবল ৩৪ বছর বয়সে, তাঁর ছেলের প্যারালাইটিক অ্যাটাক হয় এবং তিনি মারাও যান। এরপর প্রিয়জনের সমর্থন না পাওয়ায় এই সাহসী মানুষটি আজ ভোপালের বৃদ্ধাশ্রমে স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।

রয়েছেন মেয়ে: এই প্রসঙ্গে দয়াল চাঁদের স্ত্রী জানান, ক্যাপ্টেন যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন, তখন তিনি বাড়িতে ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা করতেন। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা থাকত। কারণ সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে ক্যাপ্টেন রায় দয়াল চাঁদ শত্রুদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ করতেন। যদিও, সেনাবাহিনীর প্রতি দম্পতির কোনো অভিযোগ নেই। তবে, তাঁরা এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের ব্যক্তিগত খরচ চালানোর জন্য বার্ধক্য ভাতা এবং হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য কিছু সুবিধা চান।

এভাবে কাটছে দিন: সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত থাকার কারণে, এই প্রবীণ দম্পতির মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও জীবনযাপন করার একটি দুর্দান্ত মনোভাব রয়েছে। বৃদ্ধাশ্রমে যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাতে দু’জনেই খুব খুশি। এই প্রসঙ্গে সারথি বৃদ্ধাশ্রমের সেক্রেটারি দীপক শ্রীবাস্তব জানান, “কয়েকদিন আগে ওই দম্পতি এখানে থাকতে আসেন। থাকার জন্য তাঁদের নিজস্ব বাড়ি ছিল না। আমরা তাঁদের সম্পূর্ণ যত্ন নিই। আমাদের প্রয়াস হল তাঁদের জীবনের সব সংগ্রাম ভুলিয়ে সুখী রাখা।”

শুধু একটু সাহায্য প্রয়োজন: বর্তমানে ক্যাপ্টেন রায় দয়াল চাঁদের বয়স হল ৮২ বছর। পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রীও সমবয়সী। বৃদ্ধ দম্পতির একটি মেয়েও রয়েছে, যিনি বিবাহিত। এমতাবস্থায়, এই বৃদ্ধ দম্পতির কাছে সেনাবাহিনী এবং দেশসেবার সাথে সম্পর্কিত অফুরন্ত স্মৃতি রয়েছে। তবে তাঁরা শুধুমাত্র তাঁদের ব্যক্তিগত খরচ চালানোর মত সাহায্য সরকারের কাছ থেকে চান।

WhatsApp Image 2022 07 26 at 7.26.05 PM

বিধানসভার স্পিকার করলেন সাহায্য: জানা গিয়েছে, এই খবর সামনে আসা মাত্রই স্পিকার গিরিশ গৌতম অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি, সম্মানিতও করেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর