বিহারের পরিবর্তনের গল্প লিখছেন লন্ডনের এই মেয়ে! তৈরি করেছেন হাজার হাজার কর্মসংস্থান

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেকেই চান উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে ভালো কোনো চাকরি করে নিজের জীবনকে আর্থিক ভাবে নিরাপদ করতে। তবে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। লন্ডন থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে তাঁর কাছেও ছিল ভালো চাকরির হাতছানি। কিন্তু, সেইসবকে কার্যত পাত্তা না দিয়েই নিজের গ্রামে ফিরে এসে সেখানকার মানুষদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার পথ দেখাচ্ছেন এক মহিলা। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে তিনি তাঁর অনবদ্য কাজের সুবাদে সকলের কাছেই হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণাও।

আমরা বিহারে সিওয়ানের জিরাদেই ব্লকের নরেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা সেতিকা সিংয়ের কথা বলছি। যিনি আজ গ্রামের মানুষদের কাছে এক “ভরসা” হয়ে উঠেছেন। এক্কেবারে প্রথম পর্যায়ে, তিনি তাঁর বাবা সঞ্জীব কুমারের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা “পরিবর্তন”-এর অধীনে কাজ শুরু করেন। সেখানে সফলভাবে কাজ করার পর সেতিকা সম্প্রতি “সাবরাঙ্গি” (Sabrangi)-এর অধীনে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, সেতিকার প্রচেষ্টায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বহু খেলোয়াড় ফুটবল, সাইক্লিং ও কাবাডিতে জাতীয় পর্যায়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খেলছেন।

জানা গিয়েছে যে, সেতিকার পৈতৃক গ্রাম হল জিরাদেই ব্লকের নরেন্দ্রপুরে। তাঁর বাবা সঞ্জীব কুমার “তক্ষশীলা এডুকেশন সোসাইটি”-র অধীনে “ডিপিএস স্কুল” এবং “পরিবর্তন” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স ইন সোশ্যাল পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি ২০১৬ সালে তাঁর বাবার এনজিওর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

“পরিবর্তন”-এর সাহায্যে মূলত, আশেপাশের গ্রামের বেকারদের বিনামূল্যে ব্যক্তিত্ব বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সেখানে কম্পিউটার রুম ও স্কুল থেকে শুরু করে সেলাই-এমব্রয়ডারির ​​ব্যবস্থাও রয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁতের পুরো প্রশিক্ষণ, টেলারিং সহ বিভিন্ন কাজ ধারাবাহিকভাবে চলছে সেখানে। মূলত, মহিলারাই এই কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত বাকি ব্যক্তিদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়। অভিনয়-গান কিংবা খেলাধুলা, কোনো না কোনো ভাবে এখানকার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষই গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে সেতিকা বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে তিনি সম্প্রতি “সাবরাঙ্গি” নামে একটি সংগঠন শুরু করেছেন। এর সাহায্যে মহিলাদের দ্বারা তৈরি পণ্য বাজারজাত করা হয় এবং তাদের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করা হচ্ছে।

এছাড়াও, সেতিকার কাজের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে পাশের জামালহাটা গ্রাম। একসময় এখানকার তাঁতের চাদর সারা দেশে বিখ্যাত ছিল, কিন্তু কালক্রমে গ্রামের দক্ষ তাঁতিরা মুম্বাই এবং লুধিয়ানার মতো বড় শহরে চলে যান। যার ফলে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় এই শিল্প। এখন “পরিবর্তন” আবার তাঁতের কাজ শুরু করেছে এখানে। পাশাপাশি, ইচ্ছুক মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে সেতিকা জানিয়েছেন যে, একজন মহিলা স্বাবলম্বী হলে তা পুরো পরিবারকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি, তিনি আরও জানান, “পরিবর্তন”-এর ক্যাম্পাসেই খোলা হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, স্কুল এবং বিজ্ঞান গবেষণাগার। যখন শিশুদের বাবা-মায়েরা উভয়ই কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তখন তারা ক্যাম্পাসে আধুনিক পড়াশোনা শুরু করে। এছাড়াও, এখানে মহিলারা দুই শিফটে কাজ করেন, যার ফলে তাঁরা পরিবারকেও সময় দিতে পারেন।

পাশাপাশি, কৃষির উন্নয়ন ছাড়া গ্রামীণ পরিবেশে কর্মসংস্থান যে আদৌ সম্ভব নয় সেতিকা ​​তা বুঝতে পেরেছিলেন। এমতাবস্থায়, তাঁর উদ্যোগে এখন কৃষকদের বৈজ্ঞানিক চাষাবাদের কৌশল শেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষকদের বলা হচ্ছে কখন কোন চাষ করতে হবে। এছাড়াও, কৃষিতে আবহাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে আবহাওয়া দফতর “পরিবর্তন”-এর ক্যাম্পাসে দেশের ২১১ তম আবহাওয়ার পূর্বাভাস মাপক যন্ত্রও স্থাপন করেছে। আর যার ফলে সুবিধে হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষিকার্যেও।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর