সারাদিন দেখেন রোগী, সন্ধ্যায় নিজের উপার্জন দিয়ে “এক টাকার ক্লিনিক” চালান এই ডাক্তার

বাংলা হান্ট ডেস্ক: খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যও প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। যদিও, দেশে ক্রমশ শিক্ষার হার বাড়লেও যখন স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ আসে তখন অনেক প্রশ্নই ভিড় করে আসে মনে।২০১৯ সালে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB)-র প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছিল যে, দেশে প্রতি ১,৪৫৬ জনের জন্য একজন ডাক্তার রয়েছেন। যেখানে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দ্বারা নির্ধারিত মান অনুসারে, প্রতি ১,০০০ জনে একজন ডাক্তার থাকা উচিত।

এমতাবস্থায়, আমাদের দেশে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পেতে কালঘাম ছুটে যায় সবার। পাশাপাশি, চিকিৎসার বিপুল খরচ তো আছেই। যা স্বাভাবিকভাবেই বহন করতে পারেন না অধিকাংশ মানুষই। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, দেশের দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল নাগরিকদের কি ভালো চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নেই?

   

তবে সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিতেই একা লড়ে যাচ্ছেন একজন! আজ আমরা আপনাকে এমন একজন চিকিৎসকের কথা জানাবো যিনি তাঁর মহানুভবতার জন্য অনন্য হয়ে উঠেছেন। তিনি হলেন ওড়িশার সম্বলপুর জেলার ডাঃ শঙ্কর রামচান্দানি।

বুরলায় অবস্থিত বীর সুরেন্দ্র সাই ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ রামচান্দানি সম্প্রতি “এক টাকার ক্লিনিক” শুরু করেছেন। এই ক্লিনিকে তিনি মাত্র এক টাকায় দুস্থ মানুষদের চিকিৎসা করেন।

এই প্রসঙ্গে ডাঃ রামচান্দানি জানিয়েছেন, “এটা আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল যে, তাঁদের সন্তানরা সমাজের জন্য কিছু করবে। আমার বাবা একটা মুদি দোকান চালাতেন। তিনি আমাদের সকল ভাই-বোনদের পড়াতেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হওয়ার পর গরিবদের জন্য কিছু করি।”

তিনি আরও বলেছেন, “বাবা চেয়েছিলেন যে, আমরা দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে নার্সিং হোম চালু করি। কিন্তু আজকের যুগে ফ্রি নার্সিং হোম চালানো খুবই কঠিন। এরজন্য আপনার প্রচুর সম্পদ এবং অর্থের প্রয়োজন। তাই আমি “এক টাকার ক্লিনিক” খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ডাঃ রামচান্দানি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে থাকার পর ক্লিনিকে পৌঁছে যান। এখানে তিনি প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন রোগী দেখেন। জ্বর, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগগ্রস্ত মানুষ তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন।

এদিকে, এক টাকা নেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি এক টাকা নিচ্ছি কারণ, আমি চাই না মানুষ মনে করুক যে তাঁরা বিনামূল্যে কিছু পাচ্ছেন। আমাকে তাঁরা আমার কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। অতএব, তাঁদের সম্ভাব্য সর্বোত্তম চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমি তাঁদের কাছ থেকে ফি নিচ্ছি তাই যথাযথ চিকিৎসা করা আমার দায়িত্ব।”

যদিও, ডাঃ রামচান্দানি যে এই প্রথম জনগণের জন্য কিছু করছেন তা নয়। চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রবেশের পর থেকেই তিনি সমাজের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি VIMSAR-এ একজন “সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার” হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেই সময়কার নিয়ম অনুযায়ী তিনি নিজের ক্লিনিক খুলতে পারেননি। কিন্তু সহকারী অধ্যাপক পদে এসে তিনি একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে নিজস্ব ক্লিনিক চালু করেন। ক্লিনিক শুরু করার আগেও তিনি গরিব মানুষদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক ভাবে সাহায্য করতেন।

thequint 2021 02 99ea6cfb 3bf9 4469 9bd5 5f37c4c05e75 147560980 4331829583498470 7651908882784952584 o

পাশাপাশি, গত এক বছর ধরে তিনি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত রোগীদেরও পরিষেবা দিচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে বুরলার একজন সমাজকর্মী প্রসন্ন কুমার সাহু তাঁর কাজ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন, “ডাঃ রামচান্দানির সহায়তায় অনেক কুষ্ঠ রোগী ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়েছেন। তিনি কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতাও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এই রোগটিকে সমাজ অস্পৃশ্য করে তুলেছে এবং এর কারণে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছেন না। যার কারণে তাঁদের অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু, ডক্টর রামচান্দানির মতো কিছু চিকিৎসক এই ছবিটা বদলানোর চেষ্টা করছেন।”

মহান এই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়ে ডাঃ রামচান্দানি জানিয়েছেন “বর্তমানে, আমি আমার উপার্জনের একটি অংশ এই উদ্দেশ্যে ব্যয় করছি। এছাড়াও, আমার পুরো পরিবারও আমাকে সমর্থন করে। পৃথিবীতে এমন কিছু চমৎকার মানুষও আছেন যারা এই ক্লিনিক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং আর্থিক সাহায্য করেছেন। কিন্তু এখন নিজের টাকায় এই কাজ চালাতে পারছি। যদি কখনও, কোনো রোগীর চিকিৎসার জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন হয়, তবে আমি অবশ্যই যারা সাহায্য করতে ইচ্ছুক, তাদের সাথে যোগাযোগ করব। মানুষের স্বাস্থ্য আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” এদিকে, ডাঃ রামচান্দানির এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর