বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক সফল মানুষের সফলতার (Success Story) পেছনেই থাকে এক অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি। যে কাহিনি উদ্বুদ্ধ করে অন্যদেরকে। মূলত, চলার পথে আসা সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখেই নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকেন তাঁরা। আর এইভাবেই একটা সময় তাঁরা পৌঁছে যান সফলতার শীর্ষে। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক সেই রকমই এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব।
এমনিতেই প্যারাসুট নারকেল তেল ব্যবহার করেননি এমন ব্যক্তি আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ডটিকে যিনি প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি হলেন হর্ষ মারিওয়ালা। সারা দেশেই তুমুল জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ড। আর এই ব্র্যান্ডেরই মালিক হলেন হর্ষ। একটি ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে আজ তিনি সেটিকে রীতিমতো মহীরুহতে পরিণত করেছেন। আজ তাঁর ব্যবসা ২৫ টিরও বেশি দেশে পৌঁছে গিয়েছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল হর্ষ মারিওয়ালার মোট সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ২৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
কালো মরিচের ব্যবসার মাধ্যমে সফর শুরু: উল্লেখ্য যে, হর্ষ মারিওয়ালার ঠাকুরদা বল্লভদাস ভাসানজি ১৮৬২ সালে কচ্ছ থেকে মুম্বাইতে চলে এসেছিলেন। কালো মরিচ বা গোল মরিচের ব্যবসার কারণে তিনি বিশেষ পরিচিতি অর্জন করেন। এদিকে, কালো মরিচের ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে সবাই তাঁকে “মারিওয়ালা” বলে ডাকতে শুরু করেন। মূলত, কালো মরিচকে গুজরাটি ভাষায় “মারি” বলা হয়।
এদিকে, ১৯৪৮ সালে হর্ষ মারিওয়ালার বাবা চরণদাস এবং তাঁর তিন ভাই বোম্বে অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালে, চরণদাস কনজিউমার প্রোডাক্ট বিজনেসে পদার্পন করেন এবং সাফোলা রিফাইন্ড তেলের মতো কোম্পানির পণ্যগুলিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।
মশলা বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন: মূলত, মুম্বাইয়ের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা হর্ষ মারিওয়ালা তাঁর পরিবারিক মশলার ব্যবসায় কর্মজীবন শুরু করেন। তবে বড় কিছু করার ইচ্ছে সবসময় তাঁর ছিল। এমতাবস্থায়, ১৯৯০ সালে অল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি ম্যারিকো লিমিটেডের শুরু করেছিলেন। এদিকে, ব্র্যান্ডেড নারকেল তেলের ক্ষেত্রে তাঁর এই প্রাথমিক উদ্যোগটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলির কাছ থেকে কঠোর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হলেও হাল ছাড়েননি তিনি।
প্যারাসুটকে বানিয়েছেন সবথেকে বড় ব্র্যান্ড: ৮০-র দশকে হর্ষ মারিওয়ালা যখন ব্যবসায় প্রবেশ করেন, তখন টিনের ক্যানে নারকেল তেল বিক্রি করা হত। তবে, তিনি এটি প্লাস্টিকের কৌটোয় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত, প্লাস্টিক টিনের ক্যানের চেয়ে সস্তা ছিল এবং এটি শেলফে রাখাও আরও সুবিধাজনক ছিল। পাশাপাশি, প্লাস্টিকের কৌটো দেখতেও ভালো লাগত।
এগিয়ে নিয়ে যান ব্যবসা: হর্ষ মারিওয়ালা হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার এবং ওয়েলনেস প্রোডাক্টের ব্যবসায় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি ম্যারিকোর পোর্টফোলিও ক্রমাগত প্রসারিত করতে থাকেন। আজ, ম্যারিকো লিমিটেড ভারতের পাশাপাশি বিদেশি বাজারেও একটি সুপরিচিত কোম্পানি হয়ে উঠেছে।
হর্ষ মারিওয়ালার মোট সম্পদ: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে, ম্যারিকো ভারত, এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে কিছু নির্বাচিত বাজারে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলির মাধ্যমে প্রায় ৯,৫০০ কোটি টাকার (১.৩ বিলিয়ন ডলারের) ব্যবসা করে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে হর্ষ মারিওয়ালা এবং তাঁর পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ হল প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকা।