বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনকুবেরদের তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছেন ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি (Gautam Adani)। ইতিমধ্যেই Louis Vuitton প্রধান বার্নার্ড আর্নল্টকে মোট সম্পদের নিরিখে পেছনে ফেলেছেন তিনি। এমনকি, সমগ্ৰ এশিয়ার মধ্যে আদানিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনীদের তালিকায় এই স্থান অর্জন করেছেন। ব্লুমবার্গ সূচক অনুসারে জানা গিয়েছে, ওই তালিকায় আদানির সামনে এখন টেসলার সিইও ইলন মাস্ক এবং অ্যামাজন প্রধান জেফ বেজোস রয়েছেন।
এদিকে, আদানি প্রায় সবসময়ই খবরের শিরোনামে থাকলেও বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হওয়ার পর তাঁকে ঘিরে সকলের মধ্যেই এক বাড়তি কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের আদানির জীবনের এমন দু’টি ভয়াবহ ঘটনার কথা জানাবো, যা তিনি কখনোই ভুলতে পারবেন না।
আদানিকে অপহরণ করার সময় ১১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়: এই ঘটনাটি হল ১৯৯৭ সালের। গৌতম আদানি তখন দেশের একজন উদীয়মান ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছিলেন। পাশাপাশি, সর্বত্রই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল তাঁর ব্যবসা। ঠিক সেই আবহেই তাঁকে একদিন অপহরণ করা হয়। শুধু তাই নয়, আদানির মুক্তিপণ বাবদ ১১ কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা।
এই মামলায় পুলিশ ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিল করে। জানিয়ে রাখি যে, আদানির সঙ্গে ব্যবসায়ী শান্তিলাল প্যাটেলকেও অপহরণ করা হয়েছিল। তাঁরা দু’জনেই গাড়িতে চেপে কর্ণাবতী ক্লাব থেকে মোহাম্মদপুরা রোডের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে পথে একটি স্কুটার জোর করে তাঁদের গাড়ি থামায়। এরপর একটি ভ্যান থেকে বেশ কিছুজন এসে দু’জনকে অপহরণ করে। কোনোমতে অপহরণকারীদের কবল থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। আদানি এখনও এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না। এদিকে, আদানিকে অপহরণের পেছনে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ফজল উর রহমান ওরফে ফজলু রহমানের হাত ছিল বলে জানা গিয়েছিল।
দ্বিতীয় ঘটনা, আদানি পড়েছিলেন সন্ত্রাসবাদীদের পাল্লায়: এটি ২০০৮ সালের ঘটনা। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর গৌতম আদানি তাজ হোটেলে নৈশভোজে সারতে গিয়েছিলেন। সেই সময় সেখানে হামলা চালায় সন্ত্রাসবাদীরা। মুম্বাইয়ের একাধিক জায়গায় একইসাথে হামলা চালানো হয় সেদিন।
১৬০ জনের মৃত্যু ঘটে: ওইদিন সন্ত্রাসবাদীরা তাজ হোটেলে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। যার ফলে মৃত্যু হয় ১৬০ জনের। এদিকে, দুবাই পোর্টের সিইও মোহাম্মদ শরাফের সঙ্গে ওয়েদার ক্রাফট রেস্তোরাঁয় ডিনার সারছিলেন গৌতম আদানি। সেই সময়ে হোটেলে গুলি শুরু হয়। আদানি একটু উচ্চতায় বসে থাকার কারণে, তিনি সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন। সন্ত্রাসবাদীরা সুইমিং পুল ও লিফটের দিকে অবিরাম গুলি চালাচ্ছিল। একরকম সাহস দেখিয়েই ভেতরে আটকে পড়া লোকজনকে সাহায্য করেন হোটেলের কর্মীরা। একে একে কয়েকজনকে বেসমেন্টেও নিয়ে যাওয়া হয়। আর তাঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন গৌতম আদানি। এদিকে, বেসমেন্টে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁদের তাজ চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। যা ছিল এক তলার উপরে।
১৫ ফুট দূর থেকে মৃত্যুকে দেখেন তিনি: এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান আদানি। মূলত, সেই সময় তাঁর সঙ্গে আটকা পড়েছিলেন শতাধিক মানুষ। সবাই তাঁদের জীবনের জন্য প্রার্থনা করছিলেন। আদানি জানিয়েছেন যে, তিনি সেই সময়ে ফোনে তাঁর পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। এছাড়া, হোটেলের বাইরে গাড়িতে থাকা তাঁর ড্রাইভার ও কমান্ডোদের সঙ্গেও তিনি প্রতিনিয়ত কথা বলছিলেন। ২৬ নভেম্বর পুরো রাত হোটেলের চেম্বারে কাটিয়েছিলেন আদানি। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৮.৪৫ মিনিট নাগাদ নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের বের করে আনে। এদিকে, ২৭ নভেম্বর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত বিমানে আহমেদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আদানি বলেছিলেন, “আমি ১৫ ফুট দূরত্ব থেকে মৃত্যুকে দেখেছি।”
গৌতম আদানি সম্পর্কে অজানা তথ্য: ১৯৬২ সালের ২৪ জুন গৌতম আদানি আহমেদাবাদের একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গৌতম আহমেদাবাদের শেঠ চিমনলাল নগিনদাস বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। এরপর তিনি গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমার্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। তবে দ্বিতীয় বর্ষেই তাঁকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। গৌতমের বাবা শান্তিলাল ছিলেন একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী। একদম ছোট পরিসরে ব্যবসা চালাতেন তিনি।
অল্প বয়সে এসেছিলেন মুম্বাই: এদিকে, বাবার ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার পরিবর্তে, গৌতম তাঁর পড়াশোনা ছেড়ে ১৭ বছর বয়সে মুম্বাই চলে আসেন। সেখানে তিনি হিরে ব্যবসায়ী মাহিন্দ্রা ব্রাদার্সের সাথে দুই বছর কাজ করেছেন। ২০ বছর বয়সে, তিনি মুম্বাইতে তাঁর নিজস্ব ডায়মন্ড ব্রোকারেজ ব্যবসা শুরু করেছিলেন এবং প্রথম বছরেই লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেন আদানি।
আদানি কিভাবে এগিয়েছেন: গৌতমের বড় দাদা মনসুখভাই আদানি ১৯৮১ সালে আহমেদাবাদে একটি প্লাস্টিকের ইউনিট কিনেছিলেন। সেখানে তিনি গৌতমকেও ডেকে নেন। এমতাবস্থায়, পলিভিনাইল ক্লোরাইড (PVC) আমদানির মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যে প্রবেশ করে ফেলেন আদানি। এরপর ১৯৯৮ সালে, তিনি আদানি এক্সপোর্টস লিমিটেডের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই কোম্পানি বিদ্যুৎ ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে কাজ করে।